মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পাশাপাশি জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে বিভিন্ন খবরে প্রকাশিত হয়েছে। হোয়াইট হাউসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে ট্রাম্প এই নতুন পরিকল্পনার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “গাজা উপত্যকা ফিলিস্তিনিদের জন্য আর বসবাসের উপযোগী নয়, তাই তাদের জন্য আরও ভালো ও নিরাপদ একটি স্থান খুঁজতে হবে।”
পার্সটুডে জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই অবস্থান থেকে পরিষ্কার যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এর আগেও ট্রাম্প বলেছিলেন যে গাজার ধ্বংসযজ্ঞ পুনর্গঠনের জন্য ফিলিস্তিনিদের মিশর ও জর্ডানে স্থানান্তরিত করা উচিত। তবে এবার তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে গাজার ওপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব দাবি করেছেন এবং ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই ছোট ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ইসরাইলের দখলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
ট্রাম্প, যিনি একসময় ভবন নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মানবিকতার অজুহাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চাইছেন। তবে তিনি গাজার জনগণের মতামত নেওয়ার কোনো প্রয়োজন বোধ করছেন না। বরং তার প্রশাসন গাজার ২৫ লাখ অধিবাসীকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে, ৩০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত পশ্চিম তীরকে ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের দখলকৃত ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করার সম্ভাবনার কথাও ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনায় রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। গাজা ও পশ্চিম তীরের জনগণের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখন অনেকটাই নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার ওপর। তবে স্পষ্টতই, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরাইলের সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করতে এবং ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী ভূমির নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে হাতছাড়া করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
4o
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ইচ্ছা থেকে বোঝা যায়, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের চিন্তাভাবনা থেকে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন সরে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এটাও বোঝা যায় তারা অবশিষ্ট ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলো দখল করবে।
অবশ্য, এখন পর্যন্ত সমস্ত আরব দেশ সর্বসম্মতভাবে ট্রাম্পের গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিশর এবং জর্ডানে স্থানান্তরিত করার ধারণার বিরোধিতা করেছে। তবে, এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে যে, ট্রাম্প আরব দেশগুলো বিশেষ করে মিশর ও জর্ডানের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি হুমকির ভাষাও প্রয়োগ করবে। অন্য কথায়, যদি মার্কিন সেনাবাহিনীকে গাজায় পাঠানো হয় এবং এ অঞ্চলের উপর দখল দরিত্ব কায়েম করে এবং লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে মিশরে প্রবেশ করতে বাধ্য করা হয়, তাহলে কায়রো এ পদক্ষেপ ঠেকানোর সাহস পাবে না।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ৮০ বছর ধরে দখলদারিত্ব, যুদ্ধ এবং হত্যাযজ্ঞের মুখেও যে ফিলিস্তিনি জাতি তাদের ভূমি মুক্ত করার আদর্শ ত্যাগ করেনি, তারা চুপ থাকবে না এবং মার্কিন দখলদারিত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। অতএব, পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিদের জন্য শান্তিপূর্ণ জীবন প্রদানে ট্রাম্পের দাবির বিপরীতে, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আসলে পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে নতুন যুদ্ধের আগুন জ্বালাতে চাইছেন, যার আগুন কেবল এই অঞ্চলের দেশগুলোকেই পোড়াবে না ইসরাইলকেও জ্বালিয়ে দেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন লাখ লাখ ফিলিস্তিনির উপর অবিচার নির্যাতন দূর হবে এবং তারা তাদের স্বপ্নের দেশ অর্জন করবে, কেবল তখন ফিলিস্তিনের ভূমিতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রকৃতপক্ষে, গাজায় মার্কিন মালিকানার দাবী কিংবা পশ্চিম তীরের উপর ইসরাইলি সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে মূলত ফিলিস্তিন ইস্যুকে চিরতরে মুছে ফেলার চক্রান্ত চলছে।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?