আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে আইন করে নিষিদ্ধ না করে বরং পরস্পরের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত—এমন মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার। শুক্রবার (২ মে) দুপুরে বগুড়া প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,
“আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী আচরণ করতে পারে, তাদের রাজনৈতিক অপব্যবহার থাকতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে তাদের সবাইকে খারাপ বলা যায় না। রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন বহু দল ছিল, যারা সময়ের প্রয়োজনে সংশোধন হয়েছে। তাই আইন করে দল নিষিদ্ধ করার বদলে আমাদের উচিত হবে রাজনৈতিকভাবে ভুল বোঝাবুঝি দূর করা।”
রাখাইন ইস্যুতে বাংলাদেশের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তথাকথিত মানবিক করিডোরের বিরোধিতা করে বলেন,
“বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে রাখাইনের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় যুক্ত করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো আমাদেরকে প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদে ফেলতে চাইছে। আমি বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারকে এই বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।”
ফরহাদ মজহার আরও বলেন,
“বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে হঠাতে নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক কাঠামো না বদলে নির্বাচন হলে সেই সরকার টিকে থাকতে পারবে না। আমাদের প্রয়োজন হলো ভিত্তিগত পরিবর্তন।”
তিনি সংস্কার কমিশন গঠনের সমালোচনা করে বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা যে সরকার প্রতিষ্ঠা করেছি, তারা যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়, তাহলে তাদের উচিত ছিল সরাসরি জনগণের সঙ্গে সংলাপ করা। অথচ তারা রাজধানীতে বসে কমিশনের নামে পরামর্শ সভা করে চলছে। জনগণকে বাদ দিয়ে, তাদের মতামত না শুনে সংস্কার সম্ভব নয়।”
গণপরিষদ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ফরহাদ মজহার বলেন,
“যারা আইন বোঝে, সংবিধান বোঝে, কিন্তু সক্রিয় দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন—তাদের নিয়েই গণপরিষদ গঠন করতে হবে। সেই গণপরিষদ একটি খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করবে, যা গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সম্মতি নিয়ে চূড়ান্ত হবে। এরপর সেই নতুন গঠনতন্ত্রের আওতায় নতুন সরকার নির্বাচন করা হবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রের গঠনমূলক পরিবর্তনের জন্য শুধু নির্বাচন যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন কাঠামোগত পরিবর্তনের, যার ভিত্তি হবে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
বগুড়া প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব সবুর শাহ লোটাস, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি গণেশ দাশসহ জেলার বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ। অনুষ্ঠানে ফরহাদ মজহারের বক্তব্যে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?