মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
৭ মাঘ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

ফিচার

‘যারা বলে ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার করবো, এগুলো ভাঁওতাবাজি’

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:১৯

‘যারা বলে ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার করবো, এগুলো ভাঁওতাবাজি’

তিনি বলেছেন, “যদি চাঁদাবাজি বন্ধ করা যায়, তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির মতো দলগুলো কর্মী পাবে না। আর দুর্নীতি বন্ধ হলে এ দলগুলো নেতা খুঁজে পাবে না। চাঁদাবাজির মাধ্যমে তারা কর্মী তৈরি করে, আর দুর্নীতির পথ উন্মুক্ত রেখে নেতা তৈরি করে।

তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হলো চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং দুর্নীতির পথ রোধ করা। অতীতে দুর্নীতি করা দলগুলোর নেতারা যেন ভবিষ্যতে পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে না পারে, সেই পথও বন্ধ করতে হবে। আমরা আর আগের রাজনীতিতে ফিরে যেতে চাই না।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আগামীতে ক্ষমতায় কারা যাবে। যারা এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে, যারা রাজপথে নেমে আন্দোলন করেছে, জনগণ তাদের ওপর আস্থা রাখে।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, “এই অভ্যুত্থানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা রাজপথে ছিলাম, ছাত্রদের পাশে ছিলাম। অন্য কোনো রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে রাজপথে ছিল না। বরং কিছু দলের নেতারা স্পষ্ট বলেছিলেন, তারা এই আন্দোলনের সঙ্গে নেই। এখন তারা এই আন্দোলনের কৃতিত্ব দাবি করছে।

কিন্তু আমরা প্রথম থেকেই বলেছিলাম, আমরা এই বিপ্লবের অংশীদার। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের আগেই আমরা বলেছিলাম, কেবল সরকারের পরিবর্তন যথেষ্ট নয়, রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। কোটা সংস্কার নয়, রাষ্ট্রের পুরো কাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ধ্বংস হয়েছে। তাই কেবল কোটা সংস্কার নয়, বরং রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিও আমরা প্রথম থেকেই তুলে ধরেছি।”

অতএব এখন যদি কেউ বলে আমরা ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার করবো এগুলো ভাওতাবাজি। এরা অতীতে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে, সামনে ও প্রতারণা করবে। এজন্য কোনো রকম সংস্কারে তারা বিশ্বাস করে না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রমাণিত হয়েছে, এরা দেশপ্রেমিক একটি রাজনৈতিক দল। শুধুমাত্র এই ২৪ এর জুলাই বিপ্লব নয়, শুধু এই চেতনাই ইসলামী আন্দোলন ধারণ করে না বরং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যে চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের মানচিত্র নির্মিত হয়েছে, বাংলাদেশের মানচিত্র ৭১ এর ভিত্তিতে নির্মিত হয় নাই, আমরা ভূখন্ড পেয়েছি ১৯৪৭ এর দেশভাগের মধ্যে দিয়ে। যে চেতনার ভিত্তিতে ১৯৪৭ এ আমরা নতুন ভূখন্ড পেয়েছি, নতুন মানচিত্র পেয়েছি, এই চেতনা আমাদের মধ্যে আছে। ১৯৭১ এর সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেতনা আমাদের মধ্যে আছে।

আমরা ৪৭ এর চেতনাকে যেমন ধারণ করি, ৭১ এর চেতনাকে ও ধারণ করি, একইভাবে আমরা ২৪ এর জুলাইয়ের চেতনাকে ও ধারণ করি। যদি ভবিষ্যতে সংবিধান সংস্কার করতে হয়, এই তিনটি চেতনার সমন্বয়ে সংবিধান হবে। এটাকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচন ব্যবস্থা অতীতে যে ভাবে নির্বাচন হয়েছে, এই ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে কোনো সংস্কার কার্যকর হবে না। কারণ সৎ মানুষ, প্রকৃত জনপ্রতিনিধি, মানুষকে যারা ভালোবাসে, দেশকে যারা ভালাবাসে, এমন যোগ্য মানুষ যদি পার্লামেন্টে যেতে না পারে, পার্লামেন্টে শুধু দৈত্যদানবরা যাই, কালো টাকার মালিক এবং পেশিশক্তি যাদের আছে তারাই শুধূ পার্লামেন্টে যাই, কোনোদিন দেশ সঠিকভাবে পরিচালিত হবে না।

 

অতএব আগের পদ্ধতিতে নির্বাচন দিয়ে নতুন দেশ গঠিত হবে না। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের সবচেয়ে বড় যে কাজ সেটা হলো এই নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। এইজন্য আমাদের নেতা পীর সাহেব চরমোনাই ২০০৮ সালে দাবি জানিয়েছিলেন পেয়ার পদ্ধতি বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা লাগবে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা যাতে আগামীতে নির্বাচন হয়, সবদলের মধ্যে এক আছে, শুধুমাত্র চাই না বিএনপি। কেন চাই না তারা একাই ৩০০ আসন নিয়ে নিবে। এমন একটা মতলব তাদের আছে।

বাংলাদেশকে আর একটি দলের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। অতীতে আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, এভাবেই স্বৈরাচার কায়েম হয়েছে, এভাবেই ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। অতএব আমরা আগামীতে নতুন কোনো স্বৈরাচার, নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ যাতে ক্ষমতায় না আসতে পারে এমন সকল পথ বন্ধ করে দিবো ইনশাল্লাহ।”

 

এ সম্পর্কিত আরো খবর