হাবিবুর রহমান সাগর ,জাবি প্রতিনিধি:
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একদল শিক্ষার্থী।
শুক্রবার (৯ মে) রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। এসময় শিক্ষার্থীদের ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামীলীগ নো মোর’, ‘আওয়ামিলীগকে নিষিদ্ধ কর, করতে হবে করতে হবে’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেনের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন। এসময় বক্তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানান।
মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “৫ই আগস্টের পরেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আমাদের আবারও মাঠে নামতে হচ্ছে—এটা খুবই দুঃখজনক।
যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাইয়ের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় বসেছে, তাদের প্রধান কাজ ছিল গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা; কিন্তু এ বিষয়ে তাদের কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখছি না।
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে কি না—সেই সিদ্ধান্ত গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ নিয়ে নিয়েছে। এরপরও যদি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ পুনরায় একতাবদ্ধ হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন মহল থেকে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ হিসেবে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র থেকেও এমন প্রচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশে কারা রাজনীতি করবে, সেটা বাংলাদেশের জনগণ ঠিক করবে; পাশ্ববর্তী রাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে আর কোনো রাজনীতি চলবে না। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তাদের বিচারিক প্রক্রিয়ার আওতায় আনতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, “যে আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী রাজনীতি করেছে, ২০১৩ সালে শাপলায় গণহত্যা চালিয়েছে, এ দেশে বারবার গুম, খুন ও রাহাজানি চালিয়েছে, মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে—সেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
জাপান, জার্মানি ও ইতালিতে যেভাবে ফ্যাসিস্ট দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেভাবে ২০২৪ সালের গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম লিমন বলেন, “আমরা বিগত ১৬ বছরের অধিক সময় ধরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন দেখেছি—যারা কীভাবে মানুষের গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছে, ভোটাধিকার হরণ করেছে। গুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার পিতার মতোই এক স্বৈরাচারের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
আমরা সর্বশেষ দেখতে পেয়েছি, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার ওপর আওয়ামী লীগের হামলায় দেড় হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং তেত্রিশ হাজার মানুষ আহত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “আপনারা যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেন, তাহলে আমরা ৫ আগস্টের মতো ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।”