আক্কাছ আলী ,(মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি)
মুন্সীগঞ্জের ছয়টি উপজেলায় প্রতিবছর নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করে ডিসেম্বরে দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আলু রোপণ করে থাকেন কৃষকেরা। কিন্ত এবার অনাবৃষ্টি এবং জমি থেকে দেরিতে পানি নামার কারণে আলু রোপণ বিলম্বিত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ দিন বিলম্বিত হয়েছে। বর্তমানে পুরোদমে আলু রোপণ শুরু করেছে তারা।
ফলে আলু রোপণ উৎসবে নতুন স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা। অন্যদিকে এবার বীজ আলুর বস্তা সর্বনিম্ন ৫হাজার থেকে ৮হাজার টাকা। আর বাক্স আলুর দাম ২৫ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তাই গতবারের তুলনায় এ বছর কানিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে।
শনিবার (০৭ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে সরেজমিনে সিরাজদীখান উপজেলার বয়রাগাদী ইউনিয়নের গোবরদী গ্রামের জমিগুলোতে পুরোদমে চলছে আলু রোপণের প্রস্তুতি। এছাড়া জেলার ৬টি উপজেলার জমি থেকে ধান কাটা শেষ করেছেন অনেক কৃষক। আবার অনেকের নিচু জমি হওয়ায় এখনো ধান কাটা শেষ হয়নি। তাঁদের জমি পরিষ্কার করতে আরো দেরি হচ্ছে। যাঁদের জমি থেকে পানি চলে গেছে, তাঁরা জমি আগাছা পরিষ্কার করে জমি প্রস্তুত করছেন।
এতে করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমি তৈরিসহ নানা কাজ শেষ করছেন তারা। এর ফলে পুরোদমে আলু রোপণ উৎসব শুরু করেছে কৃষকেরা।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ধামারণ গ্রামের কৃষক হাজী আলতাফ শেখ বলেন, গত বছর আলু রোপণ করে ভালো দাম পেয়েছি। তাই এবার আলু রোপণ একটু বেশি করছি। কিন্তু এবার বীজ আলুর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি মূল্যে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরাই দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।
সিরাজদীখান উপজেলার গোবরদী গ্রামের কৃষক হারুন শেখ বলেন, এবার বৃষ্টির পানি জমি থেকে দেরিতে নেমেছে। এতে জমি গুলো প্রস্তুত করতে দেরি হয়েছে। এখন আলু রোপণ শুরু করেছি। তবে এবার বীজ আলুর দাম অনেক বেশি। আমি বীজ আলুর বস্তা ৫ হাজার ৩০০টাকা টাকা দরে কিনেছি। এছাড়া জমি ভাড়া,শ্রমিক, চাষসহ বিভিন্ন খচর বেশি,তারপরও আলু রোপণ করতাছি।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু রোপণ মৌসুম এলেই রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরা আলু রোপণের কাজে যুক্ত হতে প্রতিদিন সকালে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে জড়ো হচ্ছেন। এতে কৃষকের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর আলু রোপণে জমিতে কাজ শুরু করছেন।
দিনাজপুর থেকে আসা শ্রমিক মো.জামাল বলেন, কোথাও চুক্তি অনুযায়ী, কোথাও দিন হিসেবে মজুরি নিয়ে কৃষকের জমিতে আলু রোপণকাজ করি। রোপণকাজ শেষে ফিরে যাওয়ার পর আলু তোলার সময় তারা আবারও আসি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ৬টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমির জন্য ৬৯ হাজার ৩১০ টন আলুর বীজ প্রয়োজন। এ চাহিদার বিপরীতে ৫৪ হাজার ৬৭০ টন মজুত থাকলেও ঘাটতি রয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার টন বীজ আলু। তবে বীজ আলুর কৃত্রিম সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ৬টি উপজেলার ৩৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমি। এ বছর আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ ৪৫ হাজার ১৯৫ টন, যা গত বছর ছিল ১০ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ টন।
তিনি আরও বলেন, আর বারের চেয়ে এবার ১০ দিন দেরিতে আলু রোপণ শুরু হয়েছে। এখন পুরোদমে আলু রোপণ করা হয়েছে। আশা করছি সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে আলু রোপণ শেষ হবে।