ইসলামে বিবাহকে একটি পবিত্র বন্ধন বলা হয়। তাই বিবাহ বিচ্ছেদকে সর্বশেষ উপায় হিসেবেই বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো যৌক্তিক কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ অবধারিত হলে, ইসলাম তালাকের নির্দিষ্ট পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছে।
যখন কোনো বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে, তখন স্ত্রীকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজেকে ঘরে আবদ্ধ রাখতে এবং অন্যত্র বিয়ে করা থেকে বিরত থাকতে হয়। এই সময়কালকে ইদ্দত বলা হয়। ইদ্দতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে,সেই সম্পর্কে আজ আমরা জানবো ইনশাআল্লাহ ।
কোনো স্ত্রীকে যদি কোনো স্বামী তালাক প্রদান করে তবে ওই স্ত্রীর করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা তা কুরআনুল কারিমে বিষদ বর্ণনা করেছেন। তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই স্ত্রীর অন্য কোথাও বিয়ে হওয়া বা তালাক প্রদানকারী স্বামীর নিকট পুনরায় ফিরে আসা বিষয়গুলো প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ ۚ وَلَا يَحِلُّ لَهُنَّ أَن يَكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللَّهُ فِي أَرْحَامِهِنَّ إِن كُنَّ يُؤْمِنَّ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ وَبُعُولَتُهُنَّ
أَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِي ذَٰلِكَ إِنْ أَرَادُوا إِصْلَاحًا ۚ وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
যে নারীদের তালাক দেওয়া হয়েছে, তারা তিন বার হায়েয আসা পর্যন্ত নিজেদেরকে প্রতীক্ষায় রাখবে। আর তারা যদি আল্লাহ ও শেষ দিবসে ইমান রাখে, তবে আল্লাহ তাদের গর্ভাশয়ে যা-কিছু (ভ্রূণ বা হায়য) সৃষ্টি করেছেন তা গোপন করা তাদের পক্ষে বৈধ হবে না।
তাদের স্বামীগণ যদি পরিস্থিতি ভালো করতে চায়, তবে এ মেয়াদের মধ্যে তাদেরকে (নিজেদের স্ত্রীত্বে) ওয়াপস গ্রহণের অধিকার তাদের রয়েছে। আর স্ত্রীদেরও ন্যায়সংগত অধিকার রয়েছে, যেমন তাদের প্রতি (স্বামীদের) অধিকার রয়েছে। অবশ্য তাদের উপর পুরুষদের এক স্তরের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আল্লাহ পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়।
আয়াত নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ২২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদের পর করণীয় ও আবার উভয়ে সংসার করতে চাইলে করণীয় নির্ধারণের আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লামা তকী ওসমানি এ আয়াতের তাফসিরে লিখেছেন, ‘মূলত স্ত্রীর কর্তব্য হলো তার প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ করা। যদি সে তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার সময় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে থাকে তবে তা প্রকাশ করা ও সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত অন্য কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত থাকা।
আর যদি তার গর্ভে সন্তান না থাকে তবে তালাক পরবর্তী তিন (হায়েজ) মাস ঋতুস্রাব হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন অর্থাৎ অপেক্ষা করা।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘এ আয়াত শুধু ওই সব স্বামী ও স্ত্রীদের জন্য প্রযোজ্য, যারা বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সহবাসে মিলিত হয়েছে,যাদের ঋতুস্রাব (মাসিক) হয় এবং যারা কারও ক্রীতদাসী নয়।
কারণ, ‘যদি বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী সহবাসে মিলনের আগেই তালাক সম্পাদন হয়; এমন স্ত্রীলোকদের জন্য ইদ্দত (তিন মাস অপেক্ষা) পালন করতে হয় না।
তাছাড়া যদি কোনো স্ত্রী লোকের বার্ধক্যের কারণে অথবা নিতান্ত অল্প বয়স্কা নারী হওয়ার কারণে যদি তাদের ঋতুস্রাব (হায়েজ) না হয় তবে তাদের ইদ্দত (অপেক্ষার সময়) হলো তিন মাস।
আর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীলোক; তালাকের আগেই যাদের গর্ভে সন্তান চলে এসেছে, তাদের ইদ্দত (অপেক্ষার সময়) হলো সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত।
উক্ত আয়াতে আরও বলা হয়েছে – কোনো স্ত্রীকে তালাক প্রদানের পর স্বামী যদি তাকে পুনরায় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে চায় এবং দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর ও উত্তমরূপে যাপন করতে অঙ্গীকার করে তবে পুনরায় ওই স্ত্রীকে গ্রহণের স্বামীর অগ্রাধিকার রয়েছে। পক্ষান্তরে যদি কোনো স্বামী নির্যাতনের লক্ষ্যে পুনরায় স্ত্রীকে গ্রহণ করে তবে তা হবে জুলুম।
অতঃপর উক্ত আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘স্ত্রীদের ওপর স্বামীর যেমন হক আছে, ঠিক তেমন স্বামীর ওপরও স্ত্রীর হক রয়েছে।’
পরস্পরের প্রতি পরস্পরের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তা সঠিকভাবে যদি পালন করা হয়, তবে দাম্পত্য জীবন হবে সুখ ও শান্তিময়। পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালা সংসার পরিচালনায় স্বামীকে যে উচ্চ মর্যাদা প্রদান করেছেন, তাকে আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
ইসলামে স্বামীকে তার স্ত্রীর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাদিস শরিফে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি যে তার পরিবারবর্গের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে আর আমি তোমাদের চেয়ে অধিকতর ভাল ব্যবহার করি আমার পরিবারবর্গের সঙ্গে’।
আল্লাহ তায়ালা সকলকে কুরআনের বিধান অনুযায়ী সুখ ও শান্তিময় দাম্পত্য জীবন যাপনের তৌফিক দান করুন। আমিন।