লোহিত সাগরে ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে পশ্চিমা বিশ্বের বাণিজ্যের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত সামরিক মোতায়েনের সক্ষমতা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওয়াশিংটন সামরিক, কূটনৈতিক ও লজিস্টিক সমাধানের বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে।
পার্সটুডে ও ইরনার খবরে জানানো হয়েছে , গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর সহিংসতার প্রতিবাদে ইয়েমেনি সেনারা ইসরাইলি মদদপুষ্ট জাহাজ এবং মার্কিন সামরিক সরঞ্জামবাহী জাহাজ লক্ষ্য করে টানা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগরে একাধিক মার্কিন ড্রোনও ভূপাতিত করেছে তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন যৌথভাবে ২০২৫ সালের ২৫ মার্চ থেকে ইয়েমেনে বিমান হামলা শুরু করলেও ইয়েমেনি প্রতিরোধে তার কোনো দৃশ্যমান সফলতা আসেনি।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনি বাহিনী পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন সেনাদের কার্যক্রমে বিভ্রান্তি ও হতাশা তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, লোহিত সাগরে ইয়েমেনি উপস্থিতি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক রসদ সরবরাহ ও দ্রুত মোতায়েনের সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট লোহিত সাগর দিয়ে প্রতি বছর প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য পরিবাহিত হয়। সমুদ্রপথে বিশ্ব কন্টেইনার বাণিজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ পরিচালিত হয় এই পথ দিয়ে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, লোহিত সাগরের অস্থিরতা শুধু বাণিজ্যের জন্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক কৌশলগত পরিকল্পনার জন্যও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লোহিত সাগরকে ঘিরে সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ায় অনেক বাণিজ্যিক জাহাজ এখন দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল বিকল্প পথ — কেপ অফ গুড হোপ হয়ে চলাচল শুরু করেছে। এতে সরবরাহ ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি মার্কিন সামরিক বাহিনীর জরুরি রসদ সরবরাহের গতি ব্যাহত হচ্ছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র তার ৮০ শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করে, যা এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ অবস্থায় বিকল্প হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র জেদ্দা বন্দরে সরঞ্জাম খালাস করে তা স্থলপথে পরিবহনের কৌশল বিবেচনা করছে। যদিও এই বিকল্পও সময়সাপেক্ষ এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বন্দরে পণ্য খালাসের সময় জাহাজগুলো সর্বাধিক ঝুঁকির মুখে পড়ে। স্থলপথে পরিবহন ঝুঁকি কিছুটা কমালেও ব্যয় ও সময় বাড়াবে।
এদিকে মার্কিন নীতিনির্ধারকরা এখনো দ্বিধায় রয়েছেন— ইয়েমেন পরিস্থিতির সামরিক সমাধান সম্ভব কি না। অনেক বিশ্লেষক সতর্ক করছেন, হামলার মাধ্যমে এই সংকটের অবসান সম্ভব নয়। বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থানকে আরও দুর্বল করতে পারে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, লোহিত সাগর পরিস্থিতি বিশ্ববাণিজ্যে এক গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সামরিক নির্ভরতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। সামনের দিনগুলোতে ওয়াশিংটনের পদক্ষেপ কী হবে তা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির ভবিষ্যত অনেকটাই নির্ধারণ করবে।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?