ইয়েমেনে মার্কিন সামরিক অভিযানের এক মাস পেরিয়ে গেলেও ওয়াশিংটনের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-আরাবি আল-জাদীদ এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে চালানো সামরিক আগ্রাসনেও ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনকে দমন করা সম্ভব হয়নি, বরং তারা প্রতিশোধের নীতি গ্রহণ করে আক্রমণ আরও জোরদার করছে।
পার্সটুডে সূত্রে জানা গেছে, আল-আরাবি আল-জাদীদের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল: “ইয়েমেনে মার্কিন আগ্রাসনের এক মাস পরও আনসারুল্লাহকে পরাজিত করার লক্ষ্য অর্জিত হয়নি”। এতে উল্লেখ করা হয়, ১৫ মার্চ থেকে আমেরিকা ইয়েমেনের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের আনসারুল্লাহ-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলিতে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে।
তবে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে “শুধুমাত্র আনসারুল্লাহ লক্ষ্যবস্তু” করার কথা বলা হলেও বাস্তবে হামলায় নারী ও শিশুসহ বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে আবাসিক ভবন, হাসপাতাল ও স্কুল। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের বরাতে বলা হয়েছে, পেন্টাগনের একাধিক কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এই অভিযান ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং এতে খরচ হতে পারে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। এজন্য পেন্টাগন কংগ্রেসের কাছে অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দের অনুরোধ জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আল-আরাবি আল-জাদীদের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় আনসারুল্লাহ আন্দোলন প্রতিশোধের কৌশল গ্রহণ করেছে। মার্কিন হামলার মাত্রা যত বাড়ছে, আনসারুল্লাহর প্রতিক্রিয়াও ততটাই তীব্রতর হচ্ছে। রেড সি বা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক ও মার্কিন জাহাজে একের পর এক হামলা, আমেরিকান ড্রোন ভূপাতিত করা—সবকিছুই এর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ওয়াশিংটন সেন্টার ফর দ্য স্টাডির বিশ্লেষক এলিজাবেথ ডেন্ট এক প্রতিবেদনে বলেন, “আনসারুল্লাহকে পরাজিত করা খুব কঠিন হবে, কারণ তারা প্রায় দুই দশক ধরে পশ্চিমা সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।” তিনি আরও বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণের মাত্রা বাড়ায়, তাহলে ইয়েমেনিরা শুধুমাত্র নিজের ভূখণ্ডেই নয়, সৌদি আরবের ভেতরেও পাল্টা হামলা চালাবে এবং আমেরিকার কৌশলগত দুর্বলতাকে কাজে লাগাবে।”
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে—যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে ঠিক কতটা সমর্থন দিতে পারে বা দিতে চায়? বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের মতো সর্বাত্মক সমর্থন না দিলে এই যুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এদিকে সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “হামলার মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট অবস্থান ধ্বংস করা গেলেও আনসারুল্লাহর সামরিক সক্ষমতা এখনো বহাল আছে। তারা এখনও লোহিত সাগরে হামলা চালাতে এবং আমেরিকান ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম।”
ইয়েমেন সংকট নিয়ে এই নতুন অধ্যায় আরও জটিল হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই যুদ্ধ কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সীমার মধ্যে আটকে নেই, বরং এটি বিশ্ব শক্তির অবস্থান, সামরিক ব্যর্থতা এবং জ্বালানির রুট নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ইঙ্গিত বহন করছে।
আনসারুল্লাহর প্রতিরোধ, রাশিয়া-ইরান-চীন ঘনিষ্ঠতা, আর পশ্চিমা আগ্রাসনের দীর্ঘায়িত প্রভাব—সব মিলিয়ে ইয়েমেন এখন বিশ্ব রাজনীতির নতুন সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?