ইসলামে শয়তানকে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বারবার আমাদের শয়তানের ফাঁদ থেকে সাবধান করেছেন।পবিত্র কুরআনে শয়তান শব্দটি অনেকবার এসেছে।
কারণ,শয়তান হলো আল্লাহর অবাধ্য, অভিশপ্ত ও বিতাড়িত এক শক্তি, যে পৃথিবীতে এসে মানবজাতিকে বিভ্রান্ত করতে থাকে ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
শয়তানকে মানবজাতির শত্রু হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা শয়তান তার প্ররোচনায় মানুষকে নানাভাবে পথভ্রষ্ট করে। আল্লাহ তায়লা কুরআনে বলেছেন, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
অর্থাৎ, আমাদের শত্রু শয়তানের কথা শোনার চেয়ে আল্লাহর কথা মানা উচিত। শয়তান আমাদের সবসময় ক্ষতি করতে চায়। তাই আজ আমরা শয়তানের ফাঁদ ও মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানব ইনশাআল্লাহ।
শয়তানের কৌশল ও কর্মপদ্ধতি
প্ররোচনা দেওয়া
শয়তান হজরত আদম আ. ও হজরত হাওয়া আ.-কে প্ররোচনা দিয়েছিল নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার জন্য। আল্লাহ তায়ালা সুরা আরাফ ২১-২২ আয়াতে ইরশাদ করেন, অতঃপর শয়তান উভয়কে প্ররোচিত করল, যাতে তাদের অঙ্গ, যা তাদের কাছে গোপন ছিল, তাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়।
সে বলল, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের এ গাছ থেকে নিষেধ করেননি, তবে তা এ কারণে যে, তোমরা না ফেরেশতা হয়ে যাও কিংবা চিরকাল এখানে বসবাসকারী হয়ে যাও।
পথভ্রষ্ট করা
শয়তান মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস ও প্রবঞ্চনার মাধ্যমে পথভ্রষ্ট করে। সুরা নিসা ১১৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন, আমি অবশ্যই তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, মিথ্যা আশ্বাস দেব, তাদেরকে নির্দেশ দেব, যার ফলে তারা পশুর কর্ণ ছেদ করবে ও তাদের নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে।
ধোঁকা দেওয়া
শয়তান মানুষের কাছে ধোঁকা দিয়ে অশ্লীল কাজকে সুন্দর করে তুলে ধরে। সুরা বাকারার ৩৬ আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর শয়তান এ ব্যাপারে তাদের পদস্খলন ঘটাল ও তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদেরকে নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার প্ররোচনা দ্বারা বহিষ্কৃত করল।
মন্দ ও অশ্লীল কাজের নির্দেশ
শয়তান মানুষের সামনে মন্দ ও অশ্লীল কাজকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরে। সুরা বাকারার ১৬৯ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, অবশ্যই সে (শয়তান) তোমাদের মন্দ ও অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়। আর যেন তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে এমন কথা বলো যা তোমরা জানো না।
নিজেদের দলভুক্ত করার প্রচেষ্টা
শয়তান মানুষকে বশীভূত করে নিজ দলে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। সুরা মুজাদালার ১৯ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,শয়তান তাদের বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত।
সরল পথ থেকে বিমুখ করা
শয়তান মানুষকে সরল পথ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করে। সুরা আরাফের ১৬-১৭ আয়াতে শয়তান নিজেই বলেছে,শয়তান বলল, আপনি আমাকে যেমন উদ্ভ্রান্ত করেছেন, আমিও তাদের জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকব।
অতঃপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে ও বাম দিক থেকে। আপনি তাদের বেশির ভাগকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।
মানবের শিরা-উপশিরায় বিচরণ
শয়তান মানুষের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করে ও তাকে পথহারা করে। নবী কারিম সা. বলেছেন, শয়তান মানুষের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করে। (সহিহ বোখারি : ১২৮৮)
পাপকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলা
শয়তান পাপকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলে ধরে, যাতে মানুষ সেগুলিতে লিপ্ত হয়। সুরা হিজরের ৩৯-৪০ আয়াতে শয়তান আল্লাহর কাছে বলেছে, হে আমার পালনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব ও তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব।
ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা
শয়তান মানুষের ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, যাতে সে আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যায়। হজরত উসমান ইবনে আবুল আস রা. বলেন, আমি একবার রসুল সা. -এর কাছে আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! শয়তান আমার মধ্যে ও আমার নামাজ ও কিরাতের মধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
তখন রসুল সা. আমাকে বললেন, তুমি যখন তার উপস্থিতি অনুভব করবে, তখন তার কুমন্ত্রণা হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে ও তোমার বাম দিকে তিনবার থু থু ফেলবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৬৩১)
শয়তান একদিকে মানুষের শত্রু, অপরদিকে আল্লাহর আদেশে সে মানুষের জীবনে বিভ্রান্তি ও বিপদ আনে। তার প্ররোচনায় পড়লে মানুষ পথে ভ্রষ্ট হয়ে আল্লাহর দয়ালুতা ও পূণ্য থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে, যাতে তার পথভ্রষ্টতা ও ধোঁকার শিকার না হয়ে আমরা সত্যের পথে চলতে পারি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত করুন আমিন।