মানুষের অন্তর আল্লাহ তায়ালা অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এই অন্তরই মানুষকে সৎ ও অসৎ, ভাল ও মন্দ, সত্য ও মিথ্যা চিনতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন মানুষ গুনাহ করে, তখন তার অন্তরে এক ধরনের ‘মরিচা’ পড়ে যায়। এই মরিচা তাকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, ঈমানের আলোকে ম্লান করে দেয়।
আর অন্তরের এই মরিচা, তার বিশ্বাসের দৃঢ়তা এবং নেক কাজের প্রতি আগ্রহকে দুর্বল করে দেয়। আল্লাহ তায়ালা তাঁর কিতাবে মানুষের অন্তরের শুদ্ধতার প্রতি গভীর মনোযোগ দিয়েছেন, এবং গুনাহ থেকে তওবা করার মাধ্যমে এই মরিচা পরিষ্কার করার পথও বাতলিয়ে দিয়েছেন।
অবিশ্বাস, আল্লাহর অবাধ্যতা, জুলুম, অশ্লীলতা ও অন্যান্য গুনাহ মানুষের অন্তরে মরিচা সৃষ্টি করে। কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, গুনাহের কারণে মানুষের অন্তরে কালো বিন্দু পড়ে এবং সেটি যদি তওবার মাধ্যমে পরিষ্কার না করা হয়, তাহলে তা অন্তরকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে ফেলে।
যেমন মরিচা লোহাকে খেয়ে নষ্ট করে, তেমনি গুনাহ মানুষের অন্তরের শুদ্ধতাকে ধ্বংস করে দেয়। এই অবস্থায় মানুষ ভালোমন্দের পার্থক্য বুঝতে পারে না এবং এমনকি আল্লাহর কালামও তার কাছে অসত্য মনে হতে থাকে।
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, اِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡهِ اٰیٰتُنَا قَالَ اَسَاطِیۡرُ الۡاَوَّلِیۡنَ كَلَّا بَلۡ رَانَ عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ مَّا كَانُوۡا یَكۡسِبُوۡنَ
যখন তার কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয়, তখন সে বলে, ‘পূর্ববর্তীদের রূপকথা।’ না, এটা সত্য নয়, বরং তাদের কৃতকর্মের ফলেই তাদের অন্তরের ওপর মরিচা জমে গেছে। (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত: ১৩, ১৪)
এছাড়াও, রসুল সা. বলেছেন, যখন বান্দা পাপ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো বিন্দু পড়ে। যদি সে তওবা করে, সেই কালো বিন্দু পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু যদি পাপের পর পাপ করতে থাকে, তাহলে সেই কালো বিন্দু বড় হতে থাকে, এবং এক পর্যায়ে তা তার গোটা অন্তরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। (সুনানে তিরমিজি: ৩৩৩৪)
তবে, কাফেরদের অন্তরে এই মরিচা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তাদের অন্তরে আল্লাহ তায়ালা সিল বা মোহর মেরে দেন, ফলে তারা হেদায়াত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا سَوَآءٌ عَلَیۡهِمۡ ءَاَنۡذَرۡتَهُمۡ اَمۡ لَمۡ تُنۡذِرۡهُمۡ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ خَتَمَ اللّٰهُ عَلٰۤی قُلُوۡبِهِمۡ وَ عَلٰۤی سَمۡعِهِمۡ وَ عَلٰۤی اَبۡصَارِهِمۡ غِشَاوَۃٌ ۫ وَّ لَهُمۡ عَذَاب عَظِیۡمٌ
নিশ্চয় যারা কুফরি করেছে, তুমি তাদেরকে সতর্ক কর কিংবা না কর, উভয়ই তাদের জন্য সমান, তারা ঈমান আনবে না। আল্লাহ তাদের অন্তরে ও কানে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তাদের চোখসমূহে রয়েছে পর্দা। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা আজাব। (সুরা বাকারা, আয়াত: ৬ -৭)
তবে, আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তিনি গুনাহগার বান্দাকে বারবার ক্ষমা করে দেন। তাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া উচিত নয়। কারণ, আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কুরআনে আল্লাহ বলেন, قُلْ يٰعِبَادِيَ الَّذِيْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤي اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ اِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
বলো, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি গাফুর ও রাহিম। (সুরা জুমার,আয়াত: ৫৩)
যদি আমরা গুনাহ করি, দ্রুত তওবা করে আল্লাহর রহমত লাভ করি। আল্লাহ তায়ালা বারবার ক্ষমা করেন, এবং তাঁর রহমত অব্যাহত থাকে। গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে এবং অন্তরের শুদ্ধতা অর্জন করতে, আমাদের সদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জুলুম, অশ্লীলতা ও অন্যান্য গুনাহসহ সব ধরনের পাপ থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।