রাশিয়ার সাথে সৌদি আরবের গোপন অস্ত্র চুক্তির খবর ফাঁসের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হওয়ার পরও সৌদি আরবের এহেন কর্মকাণ্ডকে বিশ্বাসঘাতকতা বলেও মন্তব্য করছে কেউ কেউ। কোন স্বার্থে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এমন বাজি ধরছেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ওসিসিআরপি’র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো সামনে এসেছে সৌদি আরব ও রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদী এই অস্ত্র চুক্তির খবর। এতে বলা হয়, চুক্তির আওতায় এরই মাঝে রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একাধিক প্যান্টসার-এসওয়ান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পেয়েছে সৌদি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় হোল্ডিং কোম্প্যানি রাস-ইলেক্ট্রোনিকসের ফাঁস হওয়া বেশকিছু নথিপত্রের বরাতে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওসিসিআরপি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক চাপ সত্ত্বেও চলছে মস্কো-রিয়াদের অস্ত্রবাণিজ্য।
ফাঁস হওয়া নথি থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৮ এপ্রিল রাশিয়া ও সৌদির মাঝে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউরোর ওই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ২০২৩ সালে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বেশকিছু প্যান্টসার-এসওয়ান অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইল অ্যান্ড গান সিস্টেম সরবরাহ করে রাস-ইলেক্ট্রোনিকস।
পাঁচ বছর মেয়াদী এ চুক্তির আওতায় রিয়াদকে ৩৯টি প্যান্টসার-এসওয়ান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেবে রাশিয়া। এ বাদে দশটি মোবাইল ব্যাটারি কমান্ড পোস্টসহ সরবরাহ করা হবে বিপুল বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। চুক্তির অংশ হিসেবে ২০২১ সালের আগস্টে রাশিয়াকে ৩২৬ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করে সৌদি।
ফাঁস হওয়া নথি অনুসারে, ২০২৩ সালে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ শুরুর পর প্যান্টসার নিয়ে দ্বিদেশীয় সহায়তা আরো গভীর করার লক্ষ্যে সৌদির কাছে ৩টি খসড়া চুক্তি প্রস্তাব করে রাশিয়া। এর মাঝে জেদ্দায় প্যান্টসার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উৎপাদনের জন্য স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তাবও ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে ওইসব চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে সৌদি আরব ও রাশিয়ার মাঝে গোপন এই অস্ত্র চুক্তিকে নানা সমীকরণে ফেলে দেখা হচ্ছে। একই সাথে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে রিয়াদ-মস্কোর এই আঁতাত। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর সব নিষেধাজ্ঞার পরও বাকি বিশ্বে রাশিয়ার প্রভাব যে বাড়ছে সেই বাস্তবতাই তুলে ধরছে এই চুক্তি। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধের মাঝেও কোণঠাসা না হয়ে উল্টো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি অর্জন করছেন পুতিন। অন্যদিকে পুতিনের প্রতি মিত্র সালমানের এই নির্ভরতা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রকেও উদ্বিগ্ন করার জন্য যথেষ্ট।
এছাড়া অত্যাধুনিক এসব অস্ত্রের ভাণ্ডার বাড়িয়ে ক্রমশ সামরিক দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আরো শক্ত অবস্থান তৈরি করছে সৌদি আরব। আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের যে প্রতিযোগিতা, সেই প্রেক্ষাপটে এটি প্রতিদ্বন্দী ইরান বা ইসরাইলের জন্যও উদ্বেগের বিষয়।

তুরস্ক, সৌদি ও পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ নিয়ে ইসলামি সেনাবাহিনী গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইরান। আপনি কি এই আর্মি গঠনের পক্ষে?