লোহিত সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি অত্যাধুনিক এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেট যুদ্ধবিমানের পতন ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ব্যবহারকারীরা ঘটনাটিকে ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’ নয় বরং ইয়েমেনি প্রতিরোধের সামনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অক্ষমতার প্রকাশ বলে উল্লেখ করেছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরাও বিষয়টিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা কাঠামোর বড় ধরনের প্রতীকী ভাঙন হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
মার্কিন নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান রণতরী থেকে টেনে নেওয়ার সময় একটি এফ/এ-১৮ বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাগরে পড়ে যায়। ওই সময় বিমানটি টেনে নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত একটি ট্রাক্টরও পানিতে পড়ে যায়। ঘটনায় একজন নাবিক সামান্য আহত হয়েছেন বলেও দাবি করা হয়। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে ‘কারিগরি ব্যর্থতা’ বলা হলেও পরবর্তীতে কিছু আন্তর্জাতিক সূত্র জানিয়েছে, ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি থেকে বাঁচতে ট্রুম্যান দ্রুত গতি পরিবর্তন করছিল—যা মার্কিন বিবৃতির সঙ্গে স্পষ্টভাবে সাংঘর্ষিক।
এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ব্যবহারকারীরা বলেন, ৬০ মিলিয়ন ডলারের এই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে কেবল ‘দুর্ঘটনা’ যুক্তি যথেষ্ট নয়। বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্যের সংকটকেই তুলে ধরছে।
এক্সে ইরানদোখত নামের একজন ব্যবহারকারী লেখেন,
“এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমান যুক্তরাষ্ট্রের শক্তির প্রতীক ছিল। এবার সেটি যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, বরং পালাতে গিয়ে ধ্বংস হয়েছে। এই পতন যেন প্রতিরোধের মুখে পরাশক্তির মুখোশ খুলে ফেলার এক মুহূর্ত।”
আরেকজন ব্যবহারকারী আমিন আল-গাবেরি পদার্থবিদ্যার সূত্র টেনে বলেন,
“ট্রুম্যানের মতো রণতরী যেভাবে পরিচালিত হয়, তার গতির সামান্য পরিবর্তনে এমন দুর্ঘটনা ঘটে না। এটি যুক্তিসংগত নয়। বরং বিমানটি ইয়েমেনি আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়েছে, এটা বলাই যুক্তিযুক্ত।”
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক স্প্রিন্টার অবজারভার মন্তব্য করেন,
“এটি শুধু একটি বিমান দুর্ঘটনা নয়। এটা মার্কিন সামরিক সক্ষমতার ভিত্তিতে ফাটলের ইঙ্গিত। একটি প্রাচীন ও অটল বলয়ের মধ্যে ধ্বসের শুরু বলা যেতে পারে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলীরেজা জাদেবর মন্তব্য করেন, “যে অবরুদ্ধ ইয়েমেন কয়েক বছর ধরে মানবিক সংকটে আছে, তারা আজ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অহংকার ধ্বংস করেছে। অথচ আমেরিকা তা ‘দুর্ঘটনা’ বলে চালাচ্ছে। তারা স্বীকার করতে ভয় পায় যে, দুর্বলদের পক্ষেও লড়াই করা সম্ভব।”
এক্স প্ল্যাটফর্মে আলী আকবর রায়েফিপুর লেখেন,
“এটি ইয়েমেনি প্রতিরোধের দ্বিতীয় বড় সাফল্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক ব্যর্থতা ঢাকতে ‘কারিগরি ত্রুটি’র গল্প বলছে। বাস্তবতা হলো, ইয়েমেন এই বিমানটিকে নিশানা করেছিল এবং সাফল্যের সঙ্গে ভূপাতিত করেছে।”
এর আগে, গত ডিসেম্বরে ‘ইউএসএস গেটিসবার্গ’ নামক মার্কিন যুদ্ধজাহাজ থেকেও একটি এফ/এ-১৮ বিমান ‘ভুল করে’ গুলি চালিয়ে ধ্বংস করার কথা স্বীকার করে ওয়াশিংটন, যদিও সে সময় ইয়েমেনি প্রতিরোধ তীব্রতর ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ নয়, বরং প্রতিরোধ ও আঞ্চলিক বাস্তবতা বিবেচনায় এফ/এ-১৮-এর পতন মার্কিন সামরিক কৌশলের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মুখর হলেও, ওয়াশিংটনের দায় স্বীকারের অনীহাই প্রমাণ করছে—মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কৌশলগত অবস্থান ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?