আশরাফুল ইসলাম (শেকৃবি প্রতিনিধি):
দেশের কৃষি গবেষণা ও দক্ষ কৃষিবিদ তৈরির প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় জমির অভাব ক্রমেই গবেষণায় সংকট সৃষ্টি করছে। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত জমি না পাওয়ায় তাদের মানসম্মত গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, থমকে যাচ্ছে নতুন উদ্ভাবনের পথ। ক্যারিয়ারের শুরুতেই গবেষণার অভাবে থেমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের অনেক উদ্ভাবনী সম্ভাবনাময় উদ্যোগ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কৃষি অনুষদের গবেষণার জন্য ৮ একরের একটি কৃষিতত্ত্ব গবেষণা মাঠ রয়েছে। তবে এনিম্যাল সায়েন্স, ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং ফিশারিজ অনুষদের জন্য কোনো পৃথক গবেষণার জন্য জমি বরাদ্দ নেই। একটি পোল্ট্রি ফার্ম থাকলেও ডেইরি ও এনিম্যাল প্রোডাকশন ফার্মের জন্য নির্ধারিত কোনো স্থান নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত সুযোগ।
প্রতিবছর শেকৃির কৃষি অনুষদ থেকে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়। অথচ এত বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জমির পরিমাণ অপ্রতুল। মৌসুমভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা সুপারভাইজারদের কাছে বছর জুড়ে গবেষণার সুযোগ না পেয়ে মৌসুম নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, যা গবেষণার মানের পাশাপাশি সময়ের দীর্ঘতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান খামার ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ মোহাম্মাদ লুতফুর রহমান জানান, চলতি রবি মৌসুমে ১৩০ জন শিক্ষার্থী গবেষণার প্লটের জন্য আবেদন করেছেন। কৃষি অনুষদের জন্য এ মৌসুমে প্রয়োজন ১৬ একর জমি, অথচ চাষযোগ্য জমি রয়েছে মাত্র অর্ধেক। অন্য অনুষদের জন্য গবেষণার জমি আরও সংকুচিত।
উল্লেখ্য, এনিম্যাল সায়েন্স ও ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের জন্য মাত্র ৬৬ শতাংশ জমিতে একটি মিনি চিড়িয়াখানা রয়েছে। এই অপ্রতুল জায়গায় থাকা প্রাণীগুলো সঠিকভাবে যত্ন না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের জন্য কোনো পৃথক পুকুর নেই। সৌন্দর্যবর্ধনের পুকুরে গবেষণার সুযোগ সীমিত, আর পানির মান নিয়ন্ত্রণ করাও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সোহেল আহমেদ বলেন, “গবেষণার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত মাঠ নেই। এরশাদ আমলে বাণিজ্যমেলার ( পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ) জন্য দখল করা মাঠটি যদি বিশ্ববিদ্যালয়কে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে গবেষণার মান অনেক উন্নত হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, “গবেষণার জন্য পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠটি আমাদের অত্যন্ত জরুরি। ১৯২০ সালে প্রকাশিত কলকাতা গেজেট অনুসারে এটি শেকৃবির অধীনস্থ ছিল। পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগ না থাকায় উচ্চতর কৃষি গবেষণা ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের কৃষির উন্নতির জন্য পর্যাপ্ত গবেষণার জমি অত্যাবশ্যক।”
উন্নত কৃষি গবেষণা ও উদ্ভাবনের পথ প্রশস্ত করতে দ্রুত জমি বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।