জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার সম্পন্ন না হলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নই ওঠে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়; তারা আসলে একটি খুনের সিন্ডিকেট।”
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বরিশালের হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে বরিশাল মহানগর ও জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “আমরা চাই যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের এবং তাদের দলকে বিচারের আওতায় আনা হোক।” শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা নিজেদের দেশপ্রেমিক দাবি করেন। তাহলে দেশপ্রেম থাকলে আসুন, গণহত্যার বিচার মোকাবিলা করুন। আমাদের নেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দিয়েছেন, অথচ নিজেরা প্রকাশ্যে গণহত্যা চালিয়েছেন।”
আওয়ামী লীগের দ্বারা জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার চার দিনের মাথায় তারাই (আওয়ামী লীগ) নিষিদ্ধ হয়েছে।”
স্বাধীনতার পর বিভেদের রাজনীতি করে দেশকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। “যুদ্ধক্ষেত্রে জীবনদান এক বিষয়, কিন্তু বুক পেতে জীবন দেওয়ার মতো ঘটনা বিরল। আবু সাঈদ মুক্তির মহানায়ক। জুলাই-আগস্টের শহীদরা যে আদর্শে জীবন দিয়েছেন, সেই লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতে হবে,” তিনি বলেন।
সম্মেলনে তিনি আরও উল্লেখ করেন,
হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়ে বেঁচে আছেন; তারা এখন জিন্দা শহীদ।’ এই শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ রেখে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘ভোলার গ্যাস সারা দেশে যাক; তবে সবার আগে বরিশালে আসুক। আর একটি সেতু বরিশাল থেকে ভোলায় যাক। ভোলাসহ পুরো বরিশাল বিভাগকে উন্নত দেখতে চাই। আমাদের যদি আল্লাহ সুযোগ দেন তাহলে বরিশালবাসীর সব দাবি পূরণের চেষ্টা করব।
আর যদি বিরোধী আসনেও থাকি তবে আপনাদের দাবিগুলো তুলে ধরব।’
কর্মী সম্মেলনের সভাপতি বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, ‘ঈদগাহ মাঠে যাতে সম্মেলন হতে না পারে তার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। সব বাধা উপেক্ষা করে অনুষ্ঠান সফল করতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার ইসলাম নির্মূল করার উদ্দেশ্যে সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের নেতাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে। তার পরও জামায়াত নেতারা পালিয়ে যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীরা এখনো চক্রান্ত করছে। আর কোনো ফ্যাসিবাদকে এ দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া হবে না। প্রশাসন ও সরকারি দপ্তরসমূহে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোটার তালিকা সঠিকভাবে তৈরি করতে হবে।’
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘বিভেদ নয়, ঐক্য ধরে রাখতে হবে। জনমত তৈরি করে ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করতে হবে। আগামী নির্বাচন ফেয়ার পদ্ধতিতে হতে হবে। যারা পালিয়ে গেছে তারা ছাড়া এ বিষয়ে দেশের সব দল একমত হয়েছে।’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল বলেন, ‘ফ্যাসিস্টরা পালিয়ে গেছে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে হবে। সেই বাংলাদেশ গড়তে জানমাল দিয়ে পাশে থাকার আহ্বান জানাই।’
সমাবেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘বরিশাল থেকে নতুন করে ইসলামী আন্দোলন শুরু হয়ে তা দেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল ছড়িয়ে যাবে। নতুন এই বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘যারা ত্যাগের রাজনীতি করে তাদের দেশ ত্যাগ করতে হয় না। আর যারা ভোগের রাজনীতি করে তারা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।’
স্বাগত বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও বরিশাল জেলা আমির অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়া সরকার মনে করেছিল হত্যা করে, জেলে দিয়ে, খুন করে, ফাঁসি দিয়ে আর আয়নাঘর দিয়ে ইসলামী আন্দোলন দমন করা যাবে। এত কিছু করেও তা সম্ভব হয়নি। তারা ভুলে গিয়েছিল এই জমিন এই দেশ আল্লাহর। যারা ১৭ বছর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে তারা পালিয়ে গেছে। এ দেশের মানুষ নিশ্চয়তা চায়, যাতে দেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় না আসে।’
বৈষম্যবিরোধী আনদোলনে শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর বাবা জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা যে ইচ্ছা নিয়ে শহীদ হয়েছে, সেই ইচ্ছা পূরণ করতে হবে। তাদের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে।’
সমাবেশে সনাতন ধর্মের মানুষের পক্ষে বক্তব্য দেন অসীম কুমার হালদার। তিনি বলেন, ‘এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় বেশি কিছু চায় না, তারা চায় শুধু শান্তি। ৫ আগস্টের পর আমার এলাকায় হিন্দুদের ওপর কোনো হামলা হয়নি। আমাদের খোঁজ রেখেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ ছাড়া তেমন কাউকে পাইনি। আমরা শান্তি চাই, আমরা কারো কাছে মাথা বিক্রি করব না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ বছরের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বছরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনিও মনে করেন?