রাজনৈতিক আশ্রয়ে ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে লন্ডনে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। ২০০৭ সাল থেকে তার বিরুদ্ধে অন্তত ৮৪টি মামলায় হয়। এসব মামলার মধ্যে ৫টিতে দণ্ড হয় তারেক রহমানের। আর খারিজ, খালাস ও অব্যাহতি পেয়েছেন ৩৯ মামলায়।
গতকাল রোববার (০১ ডিসেম্বর) ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় খালাস পেয়েছেন তারেক রহমান। বিএনপি আশা করছে, দণ্ডের বাকি চার মামলায়ও ন্যায়বিচার পাবেন তারেক রহমান।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল জানান, তারেক রহমান মিথ্যা ও সাজানো আরও চার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আছেন। রোববার যেভাবে ন্যায়বিচার পেয়েছেন বাকি চারটা মামলায়ও আশা করছি ন্যায়বিচার পাবেন।
তিনি বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৪ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০-৬৫টা মানহানির মামলা। ইতোমধ্যে ৩৯টা মামলায় খালাস, খারিজ ও চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। আদালত থেকে তিনি এসব মিথ্যা মামলায় ন্যায়বিচার পেয়েছেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমানকে এসব মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছিল।
কায়সার কামাল আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে এখনো ৪টি মামলা বাকি রয়েছে। মামলাগুলো হচ্ছে- জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট মামলা, সম্পদ বিবরণীর মামলা, মানি লন্ডারিং মামলা ও নড়াইলে মানহানির একটি মামলা। এসব মামলাতেও তিনি আইনি মোকাবিলা করতে চান। কারণ তারেক রহমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। সেনা নিয়ন্ত্রিত সেই সরকার আমলেই পরের বছর জামিনে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে লন্ডনে চলে যান। তারপর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারেক রহমান আর দেশে ফেরেননি। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে, রায়ও হতে থাকে।
বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর একটি মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তারেক রহমানকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাইকোর্টে আপিল করেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগের মামলায় ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে ৯ বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে ৩ বছর কারাদণ্ড দেন।
ওই আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ২১ জুলাই বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেন। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে দুদকের আপিলে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছিলেন হাইকোর্ট।
২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার ও পাকবন্ধু আখ্যা দিয়ে বেশ কিছু বক্তব্য দেন তারেক রহমান। সেই খবর প্রকাশিত হয় দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে।
এতে বঙ্গবন্ধুর সম্মানহানি হয়েছে জানিয়ে সে সময় নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বিশ্বাস নড়াইল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারেকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। এই মামলায় নড়াইলের একটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন