ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বে গেলে বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা দিলীপ ঘোষ। রোববার (১৮ মে) পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন,
“আমরা যখন পাকিস্তানকে টাইট দিতে পারি, তখন বাংলাদেশ কোন ছাড়! চারদিকে ভারত ঘেরা দেশটি আমাদের ওপর নির্ভরশীল। আকাশ, পানি, ব্যবসা-বাণিজ্য—সবই ভারতের হাতে। তারা এটা বোঝা উচিত যে, ভারতের বিরুদ্ধে গেলেই তাদের টিকে থাকা সম্ভব নয়।”
দিলীপ ঘোষের এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ভারত সরকার বাংলাদেশের ওপর একতরফাভাবে নতুন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (DGFT)-এর জারি করা নির্দেশনায় জানানো হয়, বাংলাদেশি পণ্য এখন থেকে কেবল নাভা শেভা (মহারাষ্ট্র) ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে। স্থলবন্দর ব্যবহার করে এসব পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ থাকবে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে—তৈরি পোশাক, ফলমূল মিশ্রিত পানীয়, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, তুলার বর্জ্য, পিভিসি ও প্লাস্টিকজাত সামগ্রী (শিল্প কাঁচামাল বাদে), কাঠের আসবাবসহ আরও কয়েকটি প্রধান রপ্তানিপণ্য।
এই নিষেধাজ্ঞা ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংরাবান্ধা ও ফুলবাড়ী স্থলবন্দরগুলোতে কার্যকর থাকবে। তবে কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন—মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল ও পাথরচূর্ণ নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশ থেকে ট্রানজিট রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছে না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নিষেধাজ্ঞা নিছক একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এর পেছনে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট। কারণ, এর মাত্র কিছুদিন আগে চীনে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে ‘সমুদ্রবিচ্ছিন্ন’ বলে আখ্যা দেন। এই মন্তব্য ভারতের পররাষ্ট্রনীতিক ও নিরাপত্তা মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ও ক্ষমতাসীন দল এ মন্তব্যকে ‘সার্বভৌমত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে দেখছে। বিজেপির শীর্ষ নেতারা বিষয়টি শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, ভৌগোলিক নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকেও উপস্থাপন করছেন। দিলীপ ঘোষের হুমকির সুরে দেওয়া বক্তব্য সেই প্রতিক্রিয়ারই প্রতিফলন।
ভারতের এই একতরফা বাণিজ্যিক পদক্ষেপ এবং রাজনৈতিক বক্তব্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর স্পষ্ট চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আঞ্চলিক অবস্থানকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে স্থলবন্দরভিত্তিক রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সরকার এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে কূটনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। ভারত যে বার্তা দিতে চায়, তা কেবল অর্থনৈতিক নয়—এটি রাজনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াস হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?