টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের পর আবারও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে মাঠ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাদপন্থীরা। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠক শেষে সাদপন্থীদের পক্ষে রেজা আরিফ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সতর্ক করে জানানো হয়েছে যে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ পরিস্থিতি এড়াতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা ও সংঘর্ষ রোধে সরকারের অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে মাঠ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রেজা আরিফ আরও বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকার মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিজ দায়িত্বে নেবে। কোনো পক্ষই মাঠে অবস্থান করবে না। উভয় পক্ষের প্রতি অনুরোধ, যেন কেউ সংঘর্ষে না জড়ায়।
তিনি বলেন,সাথীদের এবং সাধারণ জনগণের প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে, উস্কানিমূলক বক্তব্য কিংবা কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকুন। ইসলাম এবং দেশের স্বার্থে উভয় পক্ষই ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন করুন। ইসলামের সুনাম নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না।
রেজা আরিফ বলেন, ঘটনার জন্য দায়ী কারা সেটি মুখ্য নয়, তবে যা ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনুচিত। মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ, বিশেষত তাবলিগের সাথীদের মধ্যে সংঘর্ষ অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ঘটনার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আল্লাহর ওয়াস্তে সবাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখুন এবং ইসলামের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখুন।
এর আগে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের পর মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের নিয়ে বেলা ১১টায় বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচজন উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ক ম খালিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- বাচ্চু মিয়া (৭০), তাইজুল (৬৫) ও বেলাল (৬০)। বাচ্চু মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামে। বেলালের বাড়ি ঢাকার দক্ষিণ খানের বেড়াইদ এলাকায় ও তাইজুল ইসলাম বগুড়া জেলার বাসিন্দা।
বুধবার ভোর ৪টার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ইজতেমার আগে আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা করার জন্য সাদ অনুসারী মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। আর সাদপন্থীরা যেন ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে না পারেন সেজন্য আগে থেকেই ময়দানে অবস্থান করছিলেন জুবায়েরপন্থীরা।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার পর মাওলানা সাদ অনুসারী শত শত মুসল্লি কামারপাড়া ব্রিজ পার হয়ে ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের গেট দিয়ে ময়দানে প্রবেশ করেন। এসময় ইজতেমা ময়দানের ফটকে জুবায়ের অনুসারীরা পাহারায় থাকায় তাদের মারধর করে ফটক খুলে ময়দানে প্রবেশ করেন সাদপন্থীরা।
ময়দানের বিভিন্ন স্থানে ঘুমিয়ে থাকা জুবায়েরপন্থী মুসল্লিদের ওপর হামলা চালান মাওলানা সাদের অনুসারীরা। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কিছু মুসল্লি আহত হন। তাদের উদ্ধার করে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।