মোখলেছুর রহমান(ঢাকা প্রতিনিধি):
ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার অদম্য সাহস, দৃঢ়তা ও ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে সেই সময়ের আলোকচিত্র, ভিডিও ও সংবাদ প্রতিবেদন নিয়ে ‘৩৬ জুলাই: নির্ভীকদের অভিবাদন’ শীর্ষক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে দ্য ডেইলি স্টার।
আজ শনিবার বিকেল সোয়া ৩টায় দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম।
এ সময় গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্য, আন্দোলনে আহত ও সমন্বয়কসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
জনতার প্রতি বিশেষ সম্মান জানাতেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন, যারা এ দেশকে ফ্যাসিবাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ সব শহীদদের অভিবাদন জানায় ডেইলি স্টার, যারা শোষণের অবসান ঘটাতে প্রাণ দিয়েছেন। যারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন, মানসিক আঘাত পেয়েছেন এবং যারা পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব ও নিকটজনদের হারিয়েছেন, সবার সঙ্গে ডেইলি স্টার সহমর্মিতা-একাত্মতা প্রকাশ করছে।
এই হলে স্বৈরাচার, এই হলো গদি। একটা মানুষের কাছে এটা এত ভালো যে এই চেয়ারে না বসলে তার জীবন যায় না। আমাদের সন্তানের রক্তের মধ্যে দিয়ে এই স্বৈরাচার পতন হয়েছে। আর যেন কোন স্বৈরাচার না আসে। সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি কেউ যেন সরকারের দাস না হয়। Saluting the Bravehearts অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এভাবেই ছেলে হারানোর ক্ষোভ প্রকাশ করেন শহীদ মামুন হোসের মা।
ছেলে শহীদ হওয়ার সংবাদ শোনার পরের অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমার নাতি এসে বলছে দাদি তুমি কেঁদো না, চলো আমরা পুলিশের কাছে গিয়ে বলি আমাকে একটা গুলি করতে আর তোমাকে একটা গুলি করতে। তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি। ১৯ জুলাই নোয়াখালী রেলগট এলাকায় আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হন মামুন এবং রাতে নিহত হন তিনি।
শহীদ মাহবুবুর রহমানের বোন সাবরিনা রহমান বলেন, ১৯ তারিখ জুলাই নুরজাহান রোডে পুলিশের গুলিতে শহিদ হয় মাহবুব । বন্ধুদের খোঁজ করতে গিয়েছিল সে কিন্তু আর ফেরা হলো না তার। মৃত্যুর পর তার লাশ পেতেও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন তিনি এবং শহিদ ভাই বোনদের পরিবারের প্রতি মামলা করার
আহ্বান জানান ।
পুলিশের নির্যাতনে দৃষ্টি হারানো মুহাম্মদ ইমরান হোসেন কথা বলেছেন। টঙ্গী কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান জানান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলার প্রতিবাদ ও আবু সাইদের হত্যা দেখে বন্ধুরা মিলে রাস্তায় নেমেছিলাম।
১৮ জুলাই আজমপুর আন্দোলনে নামলে সেখান থেকে পুলিশের ছররা গুলি এসে চোখে লাগে। বন্ধুরা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছিল এবং ছাত্রলীগের আহতদের দেখে চলে আসে। অন্য আহতদের দেখতে যাননি তিনি৷ আহতদের উন্নত চিকিৎসার দাবি জানান ইমরান। দেশ এখনো স্বৈরাচার মুক্ত হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরো বক্তব্য প্রদান করেন শহিদ অন্তর ঢালির বাবা হানিফ ঢালি, শহিদ মোহাম্মদ সজলের বড় ভাই অনিক, প্রফেসর গীতিয়ারা নাসরিন, নুসরাত তাসনীম অর্ণা, শ্যামলী সুলতানা চাঁদনী,সায়মা লুবনা, মাসুদ রানা,
নীরব হাসান সুজন।
প্রদর্শনীটি ১ থেকে ৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পাশাপাশি প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলবেন সাংবাদিক, শিক্ষক, পোশাকশ্রমিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।