দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগাম নির্বাচন ঘিরে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা কঠিন, কারণ সরকারের ভেতরে মতপার্থক্য রয়েছে এবং সুবিধাভোগীরা বিভক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তবে তার মতে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্প্রতি অনলাইন টকশো “ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দিন”-এ অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
মাসুদ কামাল বলেন, “নির্বাচন কবে হবে সেটা বলা মুশকিল। কারণ এই সরকারের সাথে যারা রয়েছেন, তারা একেকজন একেক কথা বলেন। আবার যারা সুবিধাভোগী অবস্থানে আছেন, তাদের অবস্থানও ভিন্ন ভিন্ন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি নির্বাচন সম্ভব।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত যে সরকারগুলো এসেছে, তাদের মধ্যে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সবচেয়ে ভাগ্যবান। তারা দেশের মাঠে থাকা সব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে নিঃশর্ত সমর্থন পেয়েছে। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ও এমন সর্বদলীয় সমর্থন ছিল না। এই অনন্য সমর্থনের সুযোগ নিয়ে সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু মহল এখন নানা কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।”
টকশোতে তিনি আরও বলেন, “এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ফর্মুলেশন চলছে। কেউ বলছেন সরকার থাকবে ৩ বছর, কেউ বলছেন ২০২৯ সাল পর্যন্ত। আবার কেউ বলছেন, জাতীয় সরকার হবে—সেখানে প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন ড. ইউনূস এবং উপ-প্রধান উপদেষ্টা হবেন তারেক রহমান। এ ধরনের জল্পনা-কল্পনা প্রতিনিয়ত আমরা শুনছি।”
তার মতে, “যতক্ষণ না সব রাজনৈতিক দল সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ড. ইউনূসের সরকার একটি চাপে থাকবে। সাপোর্ট না থাকলে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়বে, আর সেই চাপ সামাল দেওয়ার ক্ষমতা এই সরকারের নেই।”
মাসুদ কামাল বলেন, “যদি আগামী সপ্তাহে তারেক রহমান এসে বলেন—আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, আমি ডিসেম্বরেই নির্বাচন চাই, তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন—ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। কারণ ড. ইউনূস সে ধরনের রিস্ক নেবেন না। তিনি জানেন, রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা না হলে সরকার টিকিয়ে রাখা অসম্ভব।”
অনুষ্ঠানে তার এ মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, সব রাজনৈতিক দলের “সমর্থনের ব্যাখ্যা” এবং “তারেক রহমানের সম্ভাব্য ভূমিকা” নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যেও নানা মতামত ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এই পর্বে সংবিধান, জাতীয় ঐকমত্য, নির্বাচনের সময়সূচি ও আন্তর্জাতিক চাপ—এই চারটি বিষয়ের দিকেই সবার নজর রয়েছে। আর মাসুদ কামালের মন্তব্যে এসব বিষয়ই আরও গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ ও অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অবস্থান ঘিরে যেমন অনিশ্চয়তা রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ফর্মুলা নিয়ে গুঞ্জনও জোরালো হচ্ছে। আর এসবের মাঝেই ড. ইউনূস সরকারের কৌশল ও টিকে থাকার সামর্থ্য এখন মূল প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সময় কোনো বিষয় নয়, নিরপেক্ষ নির্বাচনই আসল কথা। তাঁর এই বক্তব্যে আপনার সমর্থন আছে কি?