নূর আলম,দুর্গাপুর,নেত্রকোণা,প্রতিনিধি :
স্বামী মারা গেছেন দুই বছর আগে। এরপর থেকেই সাত সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে শুরু হয়েছে এক মায়ের নিঃস্ব জীবনযুদ্ধ। দিনের একবেলা খাবার জুটলেও, অন্যবেলা অনিশ্চিত। সন্তানদের শিক্ষা যেন বিলাসিতা—ক্ষুধাই এখন তাদের নিত্যসঙ্গী।
নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মউ গ্রামের বাসিন্দা মৃত সাদত আলীর স্ত্রী সুলেমা খাতুন। ছোট একটি ঘরে তার সাত সন্তান ও অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে কোনোভাবে দিন কাটছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুলেমার ঘরে সামান্য চাল ছাড়া আর কিছুই নেই। দুপুরে কেউ খায়নি, রাতের খাবার নিয়েও অনিশ্চয়তা। বড় ছেলে আইসক্রিম বিক্রি করতে বেরিয়েছে, যদি কিছু টাকা এনে খাবার আনতে পারে—এই আশাতেই বসে আছে পুরো পরিবার।
সুলেমা জানান, বেঁচে থাকতে তার স্বামী ভিক্ষা করতেন, আর তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোভাবে সংসার চালাতেন। এখন স্বামী নেই, সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন। কিছুদিন আগে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ও ধারদেনা করে এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বাকি সন্তানদের নিয়ে চলছে তার বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
“মাঝে মাঝে আশেপাশের বাড়িতে কাজ পাই, যা দ্যায় তা দিয়া খাই। দুই-তিন দিন আগে মাসুদের মা কিছু চাল দিছিলো, তাই দিয়াই বাচ্চাগুলারে খাওয়াইতেছি,” বলেন সুলেমা।
প্রতিবেশী হাসিনা বেগম বলেন, “সুলেমা খুব কষ্টে আছে। আমরা যতটুকু পারি সাহায্য করি, কিন্তু সব সময় তো সম্ভব হয় না। অনেক দিন দেখি না খেয়ে থাকে। ছোট ছেলেমেয়েগুলারে মাদ্রাসায় দিতে চায়, কিন্তু সামর্থ্য নাই। কেউ যদি ওর পাশে দাঁড়াত, অনেক উপকার হতো।”
মউ গ্রামের আরেক বাসিন্দা মো. আকবর আলী বলেন, “সুলেমার স্বামীও অসুস্থ আছিলো, ভিক্ষা করতো। তখনও কষ্টে আছিলো, এখনো কষ্টে আছে। পোলাপানগুলারে লইয়া খুব কষ্টে দিন কাটাইতেছে।”
সুলেমার একটাই চাওয়া—ছোট সন্তানদের যেন একটু পড়াশোনা করাতে পারেন, আর পেট ভরে দু’বেলা খাবার দিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যেখানে এক বেলা খাবার জোটাতে হিমশিম, সেখানে সন্তানদের শিক্ষা যেন এক দুঃস্বপ্ন। সমাজের সহৃদয় ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে হয়তো স্বপ্নটা সত্যি হতে পারে।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?