সদ্য গঠিত ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির’ অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষক গোলাম মওলা রনি। তিনি দলটির উদ্বোধনী আয়োজনের আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশ এবং বিপুল ব্যয়ের পরিমাণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যয় নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেউ বলছেন, শত কোটি টাকা খরচ হয়েছে, আবার কেউ ধারণা করছেন, কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বিশাল মঞ্চ, চোখ ধাঁধানো আয়োজন, সারাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি এবং বিলাসবহুল ব্যবস্থাপনা দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—এই অর্থের উৎস কী?
গোলাম মওলা রনি বলেন, “এই দল যারা গঠন করেছে, তারা তো কিছুদিন আগেও ছাত্র ছিলেন। তাদের অনেকেই নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। অথচ মাত্র ছয়-সাত মাসের ব্যবধানে তারা বিলাসবহুল গাড়িতে চড়ছেন, দামি ব্র্যান্ডের পোশাক পরছেন, হাতে লাখ টাকার ঘড়ি পরছেন, এমনকি অনেকে অভিজাত পরিবারে বিয়ে করছেন। প্রশ্ন হলো, তারা এত দ্রুত এত বিত্ত-বৈভব কীভাবে অর্জন করল?”
তিনি আরও বলেন, “শোনা যাচ্ছে, ধনকুবেরদের কেউ কেউ তাদের গাড়ি উপহার দিচ্ছেন, ব্যয়বহুল জীবনযাপনের সুযোগ করে দিচ্ছেন। সকালে এক গাড়ি, বিকেলে আরেক গাড়ি, রাতে নতুন গাড়ি ব্যবহার—এত বিলাসিতা তারা কীভাবে করছেন? এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথা থেকে আসছে, সেটাই এখন প্রশ্ন।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সব সময়ই অর্থের খেলায় লিপ্ত বলে অভিযোগ করেন রনি। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলই নির্বাচনী রাজনীতিতে টাকা ব্যবহার করেছে। এরশাদ যখন সেনাপ্রধান ছিলেন, তখন তার সরকারি বেতন কত ছিল? কিন্তু তারপরও তিনি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতেন। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নির্বাচন ও রাজনীতির জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থের লেনদেন করেছে, যা কারো অজানা নয়।”
গোলাম মওলা রনি আরও দাবি করেন, “যদি জাতীয় নাগরিক পার্টি কোনো শিল্পগোষ্ঠী, বিদেশি সংস্থা বা দানশীল ব্যক্তি থেকে অর্থ পেয়ে থাকে, তাহলে সেটা খুব একটা ব্যতিক্রম নয়। চীন, ভারত কিংবা আমেরিকার মতো দেশগুলোরও বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি প্রভাব রয়েছে। এমনকি শোনা যাচ্ছে, বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশে ছোট রাজনৈতিক দল ও এনজিওদের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, অতীতে রাতের ভোট পরিচালনার জন্য বিদেশি শক্তিগুলো বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তখন ভারত বিএনপিকে কিছু আসন দিতে চেয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চীনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বদলে যায়। এরপর রাতের আঁধারে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়েছিল।”
এই ধরনের রাজনৈতিক অর্থের প্রবাহ নতুন কিছু নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলেন, “শুধু ছাত্রদের টাকা কোথা থেকে এলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো মানে হয় না। বরং ভবিষ্যতে তারা যদি বড় কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং ভালো খাবারের ব্যবস্থা রাখে, তাহলে সেখানে গিয়ে খেয়ে আসাই ভালো।”
তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন, আবার কেউ এটিকে অতিরঞ্জিত বলে দাবি করছেন। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সময় কোনো বিষয় নয়, নিরপেক্ষ নির্বাচনই আসল কথা। তাঁর এই বক্তব্যে আপনার সমর্থন আছে কি?