জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিন জুয়েল অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা এখনও দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশের ভেতরে ও বাইরে বসে তারা নানা চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয়। তবে তিনি মনে করিয়ে দেন, শুধু নিম্নস্তরের দোসরদের ধরলেই হবে না, প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়েও যারা এখনো সক্রিয়, তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, “সচিবালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বসে থাকা ডেভিলদের ধরুন। যদি আপনারা না পারেন, তাহলে যুবদলকে দায়িত্ব দিন, আমরা তাদের গর্ত থেকে টেনে বের করব।”
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যুবদলের রাজনীতি করতে হলে জনগণের পাশে থাকতে হবে, তাদের হৃদয়ের ভাষা বুঝতে হবে এবং ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। তারেক রহমানের নির্দেশ মেনে আমরা রাজনীতির গুণগত মানের পরিবর্তন করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য শুধু দলকে শক্তিশালী করা নয়, বরং জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যমে রাজনীতির আদর্শিক মডেল তৈরি করা।” তিনি যুবদলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের মমতাময়ী মা বেগম খালেদা জিয়া ও তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের নির্দেশ মেনে চলার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি সরকার গঠন করলে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় প্রণীত সকল বিতর্কিত আইন বাতিল করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দলীয় চেয়ারপারসন এই সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন। তার নির্দেশেই আমরা বর্তমান সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাব। তবে আমরা সরকারের কাছে একটি দাবি জানাই— অবিলম্বে ন্যূনতম সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। যাতে ১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত মানুষ তাদের নিজস্ব পছন্দমতো শাসক বেছে নিতে পারে।”
তিনি আয়নাঘরসহ জনগণের ওপর বিগত সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, “এই সরকার শুধু ভিন্ন মত দমনই করেনি, বরং মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতাকেও খর্ব করেছে। আলেম সমাজের ওপর যে ভয়াবহ দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, তা নজিরবিহীন। মসজিদে খুতবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও কড়া নিয়ন্ত্রণ ছিল। কি বলা যাবে, কি বলা যাবে না, তা নির্ধারণ করত সরকার। নানা অজুহাতে মামুনুল হকসহ শীর্ষ আলেমদের জেলে বন্দি করা হয়েছিল।”
মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই কিশোর গ্যাং তৈরি হয়েছে গত ১৭ বছরে। তাদের বয়স কত? কারা তাদের লালন-পালন করেছে? কারা তাদের অস্ত্র হাতে তুলে দিয়েছে? যারা ১৭ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে এই গ্যাং সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে, তাদেরই আগে গ্রেপ্তার করুন। এই কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাস, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি— এসবের জন্য সাবেক স্বৈরাচারী সরকার ও তাদের দোসররাই দায়ী। তারা এখনো দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়, সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়, সুযোগ বুঝে আবারও ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচনে হেরে গেলে কেউ ফিরে আসতে পারে। কিন্তু জনগণ যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তাকে উৎখাত করে, সে আর ফিরে আসার সুযোগ পায় না।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মোহম্মদপুরবাসীর বীরত্বের প্রশংসা করেন এই যুবনেতা। তিনি বলেন, আপনারা হাসিনার খুনি বাহিনীর সামনে যেভাবে বুক পেতে দিয়েছেন, সেটি সারা দেশে প্রশংসা পেয়েছে। যে স্বপ্ন নিয়ে আপনারা এই আন্দোলনে নেমেছিলেন, এখন সময় এসেছে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের। আর এ জন্য যুবদল সব সময় আপনাদের পাশে থাকবে।
এ সময় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে সতর্ক করে শরীফ উদ্দিন জুয়েল বলেন, আমরা শুনছি মোহাম্মদপুরে হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে পুলিশ। আমি আপনাদের সাবধান করছি, এমন হলে যুবদল রাজপথে নামবে। তখন নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন না।
কর্মিসভার আয়োজনে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা কেউ এমন কিছু করবেন না, যাতে যুবদলের বদনাম হয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলে বিশৃঙ্খলার কোনো সুযোগ নেই, গ্রুপিংয়ের সুযোগ নেই। কোনো হাইব্রিড নেতাকর্মীকে আশ্রয়-প্রশ্রয়েরও সুযোগ নেই। বিগত দিনগুলোতে যুবদলের যেসব নেতাকর্মী আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখেছে; তারাই ভবিষ্যতে যুবদলের নেতৃত্বে আসবে।
কর্মিসভায় মোহাম্মদপুর থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হোসেন মোড়লের সভাপত্বিতে কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর উত্তর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তসলিম আহসান মাসুম, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান টিটু, ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহসভাপতি লিটন মাহমুদ বাবু।
বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর মোহাম্মদপুরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।
এ সময় মোহাম্মদপুর থানা যুবদলের সদ্য সাধারণ সম্পাদক শুক্কুর আলামীন, আইয়ুব আলী, মোকছেদুল হাসান মিন্টু, ইলিয়াস হোসেন, শেরেবাংলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আতিকুর রহমান অপু, সাধারণ সম্পাদক শাহ জামাল বাবু, আদাবর থানা যুবদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বাবু, ৩৩ নং ওয়ার্ড আহ্বায়ক এস এম দোলন, সদস্য সচিব ইব্রাহিম সরদার; ৩১ নং ওয়ার্ড আহ্বায়ক শাহ আলম, সদস্য সচিব স্বপন; ৩৪ নং ওয়ার্ড আহ্বায়ক জাকির; ২৯ নং ওয়ার্ড আহ্বায়ক জাহিদ হোসেন, সদস্য সচিব আলামীন; ২৮ নং ওয়ার্ড আহ্বায়ক রুহুল কুদ্দুস, সাবেক ৩০ ওয়ার্ডের সভাপতি হেলাল আহমেদ রাজু, ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সচিব মোস্তফা গাজী দুদু, যুবনেতা ইমরান হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মোল্ল্যা, জাসাস নেতা খান আহসান রেজা, মোহাম্মদপুর থানা কৃষক দলের সদস্য সচিব শাকিল মোল্লাসহ মোহাম্মদপুর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ বছরের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বছরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনিও মনে করেন?