আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াতের কোনো কোনো নেতা এখনি ক্ষমার কথা বলছেন অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আজ আপনারাও আয়না ঘরে থাকতেন। তিনি আমলা, সাংবাদিক, পুলিশ ও সামরিক প্রশাসনের
কর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সবাই আন্তরিক ভাবে বিচারকাজে সহায়তা করুন, নইলে আপনাদেরও হাসিনা একসময় আয়না ঘরে ঢুকাবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) গুম, খুন ও আয়নাঘরের নৃশংসতায় জড়িত খুনিদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার দাবিতে কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন বিজয় একাত্তর চত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতেই আমরা গুম খুনের বিচার চেয়েছি। তখন সরকার বলেছে আয়নাঘর নামে কিছু নাই। তখন আয়না ঘর থেকে ফিরে আসা একজন সেনা কর্মকর্তা আয়না ঘরের বর্ণনা দিয়েছিলেন।
তখন আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা এটাকে অস্বীকার করেছে। আজ গুম কমিশন যখন আয়না ঘর বের করেছে, প্রধান উপদেষ্টা দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে আয়না ঘর পরিদর্শন করে বলেছেন আওয়ামী শাসন ছিলো আইয়্যামে জাহেলিয়াতের শাসন ছিলো।
আওয়ামী লীগকে আমরা বার বার বলেছি এই দিন চিরদিন থাকবে না। শহীদের রক্তের দাগ শুকানোর আগেই এখন আমরা শুনি কেউ কেউ বলেন, ফ্যাসীবাদি নাকি শুনতে ভালো লাগেনা। কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করার কথা বলেন। আমরা এবি পার্টি বলি, সবার আগে আমার ভাইয়ের, বোনের খুনীদের বিচার আগে চাই।
পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসাইনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান বিএম নাজমুল হক, লে. কর্ণেল (অবঃ) দিদারুল আলম, লে. কর্নেল (অবঃ) হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
ভাইস চেয়ারম্যান বিএম নাজমুল হক বলেন, ৫ আগস্ট নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে সমস্ত শহীদের রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের ৬ মাস পর এসে সেই গণহত্যায় জড়িত খুনিদের বিচারের দাবি নিয়ে আজ আমাদের সমাবেশ করতে হচ্ছে।
কর্ণেল দিদার বলেন, আমরা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে আমরা বিতাড়িত করেছি। আজ ভারতে বসে সে আমাদের দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি ভারতের সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার কারণে আপনাদেরকে ঘৃণা করছে। অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করে সম্পর্ক স্বাভাবিক করুন।
কর্নেল হেলাল বলেন, গণহত্যাকারীদের বিচার যদি আমরা করতে না পারি তাহলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। এই আওয়ামী খুনীদের ইতিহাস আজকের না এটা শুরু হয়েছে ৭২ এর রক্ষীবাহিনীর খুনীদের মাধ্যমে। তখন রক্ষীবাহিনীর খুনের বিচার না হওয়ায় আবারও এই খুনীরা আমাদের সামানে এসেছে।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলের ১৬ বছরে যে গুম, খুন, গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ ও শত শত আয়নাঘরের বন্দীশালা করা হয়েছিল তার তুলনা শুধু হিটলারের নাৎসী আর মুসোলিনীর ফ্যাসিস্টদের সাথে হতে পারে।
যে হাজার হাজার নাগরিকের জীবন, লাশ, পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের স্মৃতি পর্যন্ত হারিয়ে গেছে, তাদের গল্প জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের পক্ষ থেক তার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আমরা জাতিসংঘ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বঙ্গীয় হিটলারের আয়নাঘরের নির্যাতনকে দুনিয়ার সামনে তুলে ধরবার জন্য।
আমরা জাতীয় ঐক্যমতের কমিশনকে আহ্বান করছি নতুন বাংলাদশকে মানবাধিকারের ভিত্তিতে গড়ে তুলবার জন্য।

‘ছাত্র-জনতা হত্যার সম্পূর্ণ বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজনীতি করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত’ আপনি কি সমর্থন করেন?