রংপুরে বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া এবং গুলি চালানো ব্যক্তিদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এতে অস্ত্রধারীদের নিয়ে রংপুরবাসীর মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তাদের আশঙ্কা, অস্ত্রধারীরা ব্যক্তিগত-রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় যেকোনো অপকর্ম ঘটিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
পুলিশ বলছে, ওই সময়ে সংঘর্ষের ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে।
অনেকেই আসামি হয়েছেন, অনেকের নামে মামলা নেই। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
জানা যায়, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয় সে সময়কার সরকার। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তার অঙ্গসংগঠনগুলোকে মাঠ দখলের নির্দেশনা দেয়।
যার পরিপ্রেক্ষিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ঠেকাতে তৎপর হন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংলগ্ন পার্ক মোড়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন তারা।
গত ১৬ জুলাই রংপুর জুড়ে দিনভর বিক্ষোভ উত্তেজনার পর, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পার্ক মোড় এলাকায়। এই সংঘর্ষের সময় বেশ কিছু যুবককে দেশীয় বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়।
ওই দিন পুলিশের সহযোগিতায় তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দুপুরে সংঘর্ষ চালাকালে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। এতে সারা দেশ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে।
ওই ঘটনার জেরে গত ১৯ জুলাই শুক্রবার ফের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে রংপুর। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হন।
এর পর থেকে লাগাতার বিক্ষোভ চলছিল। গত ৪ আগস্ট ফের রংপুর নগরীতে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার জন্য প্রকাশ্যেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অস্ত্রধারীরা।
বিভিন্ন ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় অফিস থেকে রংপুর নগরীর জাহাজ কম্পানি মোড়ে অবস্থান নেন। আর টাউন হল ও লায়ন্স স্কুলের মোড়ে অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বেশ কয়েকজন যুবককে হেলমেট পরে পিস্তল হাতে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। অনেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না, কিন্তু ধারালো রামদা, জিআই পাইপসহ দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। সবাই মারমুখী ছিলেন আন্দোলনকারীদের দমনে। সংঘর্ষে নিহত যুবলীগ নেতা হরাধন রায়ও প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করেছেন সেখানে।