অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কোনো ইচ্ছা নেই এবং অযথা কালক্ষেপণ না করেই সরকার সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের পথে রয়েছে—এমনটাই জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে চায় না, বরং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি কার্যকর সংস্কার কাঠামো গড়ে তুলে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়। ইতোমধ্যে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি কার্যকর হতে শুরু করেছে। কিছু সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবায়ন করা হবে যাতে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায়।
আইন উপদেষ্টা আরও জানান, সরকার ছয়টি বিশেষ কমিটি গঠন করে বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য প্রায় দুই হাজার সুপারিশ পেয়েছে। এসব সুপারিশ পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য প্রতিটি খাতকে আধুনিক, স্বচ্ছ ও কার্যকর করে গড়ে তোলা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম এবং ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সরকারের তরফ থেকে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং বিভিন্ন নীতিগত সংস্কারের বিষয়ে তাদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। তবে, সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু পক্ষ মনে করছে, সরকার সত্যিকার অর্থে একটি টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছে, অন্যদিকে কিছু বিরোধী দল এটিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছে।
সরকারি সূত্রগুলোর দাবি, সংস্কার কার্যক্রম দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে বাস্তবায়ন করা হবে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হবে। সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংস্কার প্রক্রিয়া নির্বাচনী আইন, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা, প্রশাসনিক দক্ষতা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা খাতের কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছে।
সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, তারা স্বল্পমেয়াদী কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে না, বরং দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে চায়। তবে, সরকার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কতটা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ থাকতে পারবে, সেটি নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ এবং তাদের সহযোগিতা সংস্কার কার্যক্রমের সফলতার অন্যতম শর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপ দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আইন উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী, সরকার দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সংস্কার বাস্তবায়ন করছে এবং ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কোনো অভিপ্রায় নেই। এখন দেখার বিষয়, সরকার কতটা দ্রুত ও কার্যকরভাবে এই পরিবর্তন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে অংশ নেয়।

বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব ও আনসারের ড্রেস নিয়ে আপনার মতামত কী?