মাতৃভূমির মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা, ধর্মপ্রাণ মানুষের সহজাত স্বভাব। এই ভালোবাসার প্রভাব প্রত্যেকের মন ও প্রাণে থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত রাখতে হলে স্বদেশপ্রেম আবশ্যক। আল্লাহর রাহে একদিন এবং এক রাতের সীমান্ত প্রহরা, এক মাস রোজা পালন এবং ইবাদতে রাত জাগরণের চেয়ে উত্তম।
ইসলামের মূলনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল দীন, যা কল্যাণকামিতা। হাদিস শরিফের মতে, দেশ ও জনগণের কল্যাণকামী হওয়া মুমিনের দ্বীন এবং ঈমানের অংশ। সুতরাং, যেসব চিন্তা এবং প্রবণতা দেশের জনসাধারণের জন্য ক্ষতিকর, তা অকপটে প্রকাশ করা আমাদের দীনি এবং ঈমানী দায়িত্ব।
দেশের সীমান্ত রক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত রক্ষা করেন। তারা মানুষের জানমাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। ইসলাম সীমান্ত রক্ষাকে ইবাদত হিসেবে ঘোষণা করেছে। কুরআনে বলা হয়েছে,
হে মুমিনগণ! সবর অবলম্বন করো, মোকাবিলার সময় অবিচলতা প্রদর্শন করো এবং সীমান্ত রক্ষায় স্থিত থাকো। আর আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে চলো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (সুরা আল-ইমরান,আয়াত: ২০০)
হাদিসে হজরত সাহল ইবনে সাদ সাঈদি রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেয়া, দুনিয়া ও এর ওপর যা কিছু আছে, তার চাইতে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারও চিবুক পরিমাণ জায়গা, দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত কিছুর চাইতে উত্তম। আল্লাহর পথে বান্দার একটি সকাল বা বিকাল ব্যয় করা, দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সব কিছুর চাইতে উত্তম।(বুখারি শরিফ, হাদিস: ২৬৯৩)
সীমান্ত রক্ষা এমন একটি ইবাদত, যার সওয়াব মৃত্যুর পরও জারি থাকে। হজরত সালমান রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন,আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহর রাহে একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত প্রহরা এক মাস রোজা পালন এবং ইবাদতে রাত জাগরণের চেয়ে উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সওয়াব জারি থাকবে। এবং তার (শহীদসুলভ) রিজিক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে ব্যক্তি ফেতনাবাজদের থেকে নিরাপদে থাকবে। (মুসলিম শরিফ, হাদিস: ৪৭৮৫)
আরেক হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আমি কি তোমাদের কদরের রাতের থেকেও শ্রেষ্ঠ রাতের কথা জানাবো না? সে ওই পাহারাদারের রাত, যে ভয়সঙ্কুল স্থানে পাহারা দেয়, তার আশঙ্কা হয় যে সে হয়ত তার পরিবারে জীবিত ফিরতে পারবে না।(মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস: ২৪২৪)
এইসব বাণী থেকে স্পষ্ট, সীমান্ত রক্ষার কাজ ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর সওয়াব অপরিসীম। আল্লাহর রাহে সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করেন, এবং এর মাধ্যমেই তিনি আল্লাহর নিকট সওয়াব লাভ করেন।