মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫
৭ মাঘ, ১৪৩১

পরিক্ষামূলক সংস্করণ

ইসলাম ও জীবন

ভালোবাসা না অভিমান, কী বলে ইসলাম?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশঃ ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:৫৪

ভালোবাসা না অভিমান, কী বলে ইসলাম?

মান-অভিমান মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, এমনকি কর্মক্ষেত্রেও এক ধরনের চাপ তৈরি করে। কখনো কখনো এই মান-অভিমান এমনভাবে পরিণত হয় যে, মানুষ তার প্রিয়জনের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়,পরস্পরে কথা বার্তা থেকেও দূরে থাকে, এমনকি একে অপরকে দেখা পর্যন্ত এড়িয়ে চলে। এ ধরনের মনোভাব ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে অশান্তি তৈরি করে।

ইসলাম এই মানবিক আবেগকে গুরুত্ব দেয়, তবে যখন এটা সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব ও অনীহা সৃষ্টি করে, তখন তা গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রিয় নবি রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য এটা বৈধ নয় যে সে তার ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করে রাখবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৭৬)

এখানে তিন দিনের একটি সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে মানুষ তার রাগ, ক্ষোভ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার সময় পায়।

আবেগের উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ

হাদিসবিশারদরা বলছেন, এই তিন দিন সময় দেয়ার উদ্দেশ্য হলো, মানুষ যেন তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট না হয়। তবে যদি ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিক জীবনে এভাবে কথা বন্ধ রাখা কোন নৈতিক বা শরিয়া ভিত্তিক কোনো কারণ না থাকে, তবে এটা পরিহার করা উচিত।

অভিমান যেন বিদ্বেষে পরিণত না হয়

অভিমান বা ক্ষোভের কারণে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হলে, তা যেন বিদ্বেষ বা শত্রুতা না সৃষ্টি করে। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর দরবারে বান্দার আমল পেশ করা হয়।

আল্লাহ সকল মুসলিমকে ক্ষমা করে দেন, কিন্তু যাদের মধ্যে বিদ্বেষ থাকে, আল্লাহ তাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন না যতক্ষণ না তারা একে অপরকে ক্ষমা করে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৫)

এই হাদিস আমাদের শেখায় যে, কোনো কারণে অভিমান বা রাগ হলে তা যেন মনের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে না পারে।

হাসিমুখে কথা বলা ইসলামের আদর্শ

ইসলামে হাসিমুখে কথা বলাকে একটি সদকা বা আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা এবং তার পাত্রে পানি ভরে দেওয়াও তোমার জন্য সদকা।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭০)

সম্পর্কচ্ছেদ মৃত্যুর মতো

সম্পর্ক ছিন্ন করা মানুষের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর এবং ইসলামে এটাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিষেধ করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে তার ভাইয়ের সাথে এক বছর সম্পর্ক ছিন্ন করে রাখে, সে যেন তাকে হত্যা করল।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯১৫)

এই হাদিস আমাদের জানিয়ে দেয় যে, সম্পর্কের গুরুত্ব ও তার বিচ্ছেদের ক্ষতির ব্যাপারে নিজে অনুধাবন করা ও সতর্কতা অবলম্বন করা।

যে অভিমান ভাঙে, সে উত্তম

ইসলামের শিক্ষা হলো, যে ব্যক্তি অভিমান ভাঙতে এগিয়ে আসে, সে-ই উত্তম। রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাথে তিন দিন বা তার বেশি সময় সম্পর্ক ছিন্ন রাখে, এবং তারা একে অপরকে দেখা হলে মুখ ফিরিয়ে চলে,যে অবশ্যই প্রথমে সালাম দেবে, সেই ব্যক্তি উত্তম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৭৭)

অর্থাৎ সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে আগে যারা একে অপরকে সালাম দেবে, তারা সত্যিকার অর্থে উত্তম।

দ্বিনের প্রশ্নে সম্পর্ক ছিন্ন করা বৈধ

এছাড়া, দ্বিন বা ধর্মীয় বিষয়ে কাউকে সতর্ক করার জন্য বা পাপের বিষয়ে সংশোধন করার জন্য সম্পর্ক কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা বৈধ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, রসুলুল্লাহ সা. তাবুক যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে পড়া তিন সাহাবির সঙ্গে ৫০ দিন কথা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।পরে তাদের তাওবা কবুল করে তাদের সাথে আবার সদ্ব্যবহার করা হয়। (আরিদাতুল আহওয়াজি, ৮/৯১)

ইসলাম মানুষের আবেগ ও অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু তা যদি সম্পর্কের মধ্যে বিদ্বেষ বা বিচ্ছেদ তৈরি করে, তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো পারস্পরিক সম্মান, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ, যা কখনোই অভিমান বা ক্ষোভের কারণে দুর্বল হওয়া উচিত নয়। ইসলামের আদর্শ অনুসরণ করলে, মানুষ একে অপরের সঙ্গে হাসিমুখে, সদাচারে শুভ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে। ইনশাআল্লাহ ।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনকে ইসলামের আদর্শে আলোকিত করুন আমিন ।

এ সম্পর্কিত আরো খবর