বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবন সিদ্ধান্ত, যা প্রতিটি মানুষের জন্য একটি নতুন অধ্যায় শুরু করে। ইসলামে বিবাহকে একটি পবিত্র সম্পর্ক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যা শুধুমাত্র জীবনের আনন্দের অংশ নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ। তবে, বিয়ে করার উপযুক্ত সময়টি কখন হবে, তা নির্ধারণ করা একান্তই ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিষয়। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে, বিয়ের সঠিক সময় নির্ভর করে শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক সক্ষমতার ওপর। তবে, সবার জন্য একে অন্যের চেয়ে উত্তম সময় হতে পারে।
রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা, তা চক্ষুকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে রক্ষা করে। আর যে সামর্থ্য রাখে না সে যেন রোযা রাখে, রোযা হল তাহার জন্য খোজা হওয়া।’ (বুখারী শরীফ)
ইসলাম বিবাহের মাধ্যমে মানব জাতির সুষ্ঠু ধারার প্রতিফলন চায় এবং এই উদ্দেশ্যেই বিবাহের শর্তগুলোকে সহজ, বাস্তবানুগ এবং মানবিকভাবে গ্রহণযোগ্য করেছে। ইসলাম কোন কঠিন ও জটিল শর্তে বিবাহকে আবদ্ধ করেনি, বরং বালেগ ও বুদ্ধিসম্পন্ন দুজন নর-নারীর সম্মতির উপর ভিত্তি করে এটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
বয়সের সীমা নয়, শারীরিক সক্ষমতা ও সুস্থতা গুরুত্বপূর্ণ
ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়নি। বরং, এর জন্য সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা, শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত সক্ষমতা বিবেচনায় রাখা হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ রহ. বলেন, ‘নবী করীম সা. হজরত আয়েশাকে ৯ বছর বয়সে বিবাহ করেছিলেন।’ তবে, এর মাধ্যমে বোঝানো হয়নি যে, সবার জন্য ৯ বছর বয়সে বিবাহ করা উচিত। বরং, ইসলামের মূল দৃষ্টিকোণ হল—শারীরিক সক্ষমতা, সুস্থতা ও শারীরিক গঠন হলো বিবাহের জন্য প্রাথমিক শর্ত।
যদি কোনো নারী সুস্থ ও সুগঠিত থাকে এবং শারীরিকভাবে পুরুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হয়, তবে তার বয়স ৯ বছর না হলেও বিবাহ করা যায়, যদি তার স্বাস্থ্যগত কোনো ঝুঁকি না থাকে। (বাদায়েউস সানায়)
এছাড়া, বয়সের পার্থক্য কম থাকা উত্তম, যেমন হজরত ফাতিমা রা. -এর বয়সের সাথে হজরত আলী রা.-এর বয়সের পার্থক্য ছিল কম।
বিবাহের সহজ, বাস্তবানুগ পদ্ধতি
ইসলামের দৃষ্টিতে, বিবাহ একটি সুস্থ সম্পর্কের ভিত্তি, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি উপায়। এটি সমাজে শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা এবং শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। ইসলাম বিবাহকে জটিল বা কঠিন কোনো শর্তে আবদ্ধ করেনি, বরং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সহজ, বাস্তবানুগ এবং সুষ্ঠু প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এজন্য, আমাদের উচিত ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী বিবাহের এই মহান সংস্কৃতি গ্রহণ করা, যাতে সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রতিষ্ঠিত হয়।