মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের সুখ এবং দুঃখের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন, এবং এর মাধ্যমে তাঁর উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দিয়ে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩৫)
পরীক্ষার উদ্দেশ্য ও আল্লাহর হেকমত: আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। কেউ কষ্ট বা অসুখের মাধ্যমে, আবার কেউ সুখের মধ্যে পরীক্ষা লাভ করেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার বিশ্বাস, ধৈর্য এবং অবস্থান যাচাই করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, কঠিন শাস্তির পূর্বে আমি তাদেরকে হালকা শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। (সুরা সাজদাহ, আয়াত: ২১)
এছাড়া, কোনো জাতিকে সীমালঙ্ঘনের জন্য আজাব দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়, যাতে অন্যরা সতর্ক হয়।
পরীক্ষার মাধ্যমে মুমিনের কল্যাণ: মুমিনদের পরীক্ষা কখনোই কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়। বরং, পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাদের গুনাহ মাফ করেন, মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং পরকালীন শাস্তি লঘু করেন। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, মুসলমানের ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আপতিত হয়, এমনকি তার দেহে যে কাঁটা ফোটে, এসবের বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারি শরিফ, হাদিস: ৫৬৪১ / মুসলিম শরিফ, হাদিস: ২৫৭৩)
এভাবে, বিপদ-মসিবতের মাধ্যমে আল্লাহ মুমিনদের কল্যাণ করেন, এমনকি কিয়ামতের দিন তাঁদের প্রতিদান দেখে অন্যরা আফসোস করবে।
পরীক্ষার দুটি উদ্দেশ্য: পরীক্ষার মূলত দুটি প্রধান উদ্দেশ্য রয়েছে: ১. আল্লাহ বান্দাকে এমন কিছু দিয়ে পরীক্ষা করেন, যাতে তার স্থান জান্নাতে উন্নীত হয়। ২. বান্দার গুনাহের শাস্তি দুনিয়াতেই দেওয়া হয়, যাতে পরকালের কঠিন শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার মূল্য: যখন আমরা কোনো পরীক্ষার সম্মুখীন হই, আমাদের মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ তায়ালা কাউকে এমন বোঝা চাপান না যা সে বহন করতে সক্ষম নয়। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬) এজন্য আমাদের কখনোই নিরাশ হওয়া উচিত নয়, বরং ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হতে পারে, তুমি একটি জিনিস অপছন্দ করো যা তোমার জন্য ভালো এবং তুমি একটি জিনিস পছন্দ করো যা তোমার জন্য খারাপ। আল্লাহ জানেন কিন্তু তোমরা জানো না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)
এটা বুঝতে হবে যে, আল্লাহ আমাদের ভালো চান এবং তাঁর পরীক্ষা কখনোই বিনা কারণে হয় না। প্রতিটি পরীক্ষার পেছনে আল্লাহর একান্ত পরিকল্পনা থাকে, যদিও তা আমরা তৎক্ষণাৎ বুঝতে না পারি।
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার পুরস্কার: রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, মুমিনের বিষয়টি কতই না চমৎকার! তার জন্য কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নেই। তার জন্য যদি কোনো খুশির ব্যাপার হয় এবং সে কৃতজ্ঞতা আদায় করে, তাহলে সেটি তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি কোনো দুঃখের বিষয় হয় এবং সে ধৈর্য ধারণ করে, সেটিও তার জন্য কল্যাণকর। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৯৯৯)
এটা আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যে, যে কোনো পরিস্থিতিতেই আমাদের মনোভাব ইতিবাচক রাখা উচিত। এটি পরিস্থিতিকে ভালো দিকে পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর স্মরণ করো, যখন তোমাদের রব ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে আরো বেশি দেব, আর অকৃতজ্ঞ হলে নিশ্চয় আমার শাস্তি কঠোর।(সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৭)
কষ্টের পর স্বস্তি ও পুরস্কার: একটি বিষয় মনে রাখা উচিত যে, পরীক্ষার পর আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যে পুরস্কার দেন তা পরীক্ষার তুলনায় অনেক বেশি হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, সুতরাং কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে, নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে। (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত: ৫-৬)
পরীক্ষার সময়, যদি আমরা সঠিক মনোভাব রাখি, তবে আল্লাহ আমাদের জন্য মহান পুরস্কার প্রস্তুত করেছেন।
ঐতিহাসিক উদাহরণ: রসুল সা. এবং সাহাবিদের জীবনেও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। মক্কায় ইসলাম প্রচারের ১৩ বছরে মাত্র কিছু মানুষ মুসলমান হয়েছিল, কিন্তু হিজরতের পর ইসলাম পুরো আরব উপদ্বীপে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা কখনোই পরীক্ষা দেন না স্রেফ কষ্ট দেওয়ার জন্য, বরং তার পরিণতি মহান হয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব পরীক্ষার সময় ধৈর্য এবং কৃতজ্ঞতা সহকারে তাঁর প্রতি আস্থা রাখার তৌফিক দিন।কেননা পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাদের পরিশুদ্ধ করেন, তাঁদের গুনাহ মাফ করেন এবং পরকালে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব পরিস্থিতিতে সহ্যশক্তি ও সঠিক মনোভাব রাখার ক্ষমতা দান করুন। আমিন।