মানুষ মহান আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। গোটা দুনিয়ার সমস্ত কার্যক্রম মানুষের চারপাশে আবর্তিত হয়। মানুষের ভালো-মন্দ, পথচলা, খাওয়া-দাওয়া, সংসার গঠন, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন এসবই আল্লাহর পরিকল্পনার অধীনে সংঘটিত হয়। আল্লাহ যা ভালো মনে করেন, তাই তিনি করেন, এবং তাঁর পরিকল্পনার সঙ্গে কোনো কিছু মিলানো বা সংশোধন করা সম্ভব নয়। তিনি কারো পরামর্শ বা উপদেশ ছাড়াই সবকিছু পরিচালনা করেন।
শয়তানের ষড়যন্ত্র ও আল্লাহর পরিকল্পনা
মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই শয়তান তাকে পথভ্রষ্ট করার জন্য চেষ্টা করে আসছে। বারবার শয়তান মানুষকে ভুল পথে পরিচালনা করতে ষড়যন্ত্র করেছে, কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর পরিকল্পনায় সঠিক পথের দিশা দেখিয়েছেন। আল্লাহর এই পরিকল্পনার প্রতি সৎ বিশ্বাস, শিক্ষা এবং নবী-রসুলের মাধ্যমে মানুষের জন্য এক সঠিক পথ নির্দেশিত হয়েছে। সূরা আলে ইমরানের ৫৪ নম্বর আয়াতে এ ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে।
নবী-রসুলদের ভূমিকা
মহান আল্লাহ হজরত আদম আ. থেকে শুরু করে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসুল পাঠিয়েছেন, যারা তাদের যুগের উপযুক্ত বাণী দিয়ে মানুষকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিচালিত করেছেন। নবী-রসুলদের মূল লক্ষ্য ছিল মানুষকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা করা ও আল্লাহর পথে আনার চেষ্টা করা।
মহান আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়
কুরআনুল কারিমে আল্লাহর সর্বশেষ বাণী। নবী মুহাম্মদ সা.-এর সময়েও মক্কার কাফেররা নবীকে কষ্ট দিয়েছিল। তারা মুসলিমদের ধোঁকা দেওয়ার নানা ফন্দি-ফিকির করেছিল। কিন্তু আল্লাহ তাঁর মেহেরবানিতে ঈমানদারদের সাহায্য করেছেন এবং তাদের বিজয় দান করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর পরিকল্পনায় ঈমানদারদের সর্বদা সাহায্য করেন।
ক্ষমতা, ধন-সম্পদ, এবং সম্মান
আজও পৃথিবীতে অনেক শাসক জনগণকে নির্যাতন করে, জেলে ভরে, গুম করে, খুন করে নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করে। তবে আল্লাহর ইচ্ছায় এসব শাসকরা পতিত হয়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা হারায়। অনেককে দেশ ছাড়তেও হয়েছে। আল্লাহর পরিকল্পনায় কোনো ভুল হতে পারে না, এবং তাঁর পদক্ষেপের কোনো বাধা নেই। তিনি আমাদের একমাত্র অভিভাবক ও সাহায্যকারী।
আল্লাহর চূড়ান্ত ক্ষমতা ও রাজত্ব
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, বলো, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! আপনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন। যাকে ইচ্ছা আপনি সম্মান দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা আপনি হীন করেন। কল্যাণ আপনারই হাতে। নিশ্চয়ই আপনি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান (সুরা আলে ইমরান : ২৬)।
এ আয়াতে আল্লাহর সীমাহীন শক্তি ও মহা কুদরতের প্রকাশ ঘটেছে। তিনি বাদশাহকে ফকির এবং ফকিরকে বাদশাহে পরিণত করেন। তিনিই সব ক্ষমতার মালিক।
আল্লাহর রাজত্ব: চিরস্থায়ী ও চিরন্তন
আল্লাহ তায়ালাই মহাজগতের সব ক্ষমতার অধিকারী। তিনি রাজাধিরাজ, এবং তাঁর রাজত্ব সমগ্র সৃষ্টিজগতে কার্যকর। পৃথিবী তাঁর রাজত্বের ক্ষুদ্রতম অংশ মাত্র। মুত্তাকিরা থাকবে স্রোতস্বিনী বিধৌত জান্নাতে, যোগ্য আসনে, সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী আল্লাহর সান্নিধ্যে।(সুরা কামার : ৫৪-৫৫) সৃষ্টিজগতে সবার রাজত্ব অস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর রাজত্ব চিরন্তন ও চিরস্থায়ী।
কেয়ামতের দিন আল্লাহর একক কর্তৃত্ব
হজরত রসুলুল্লাহ সা. বলেন, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন পৃথিবী তাঁর মুঠোয় ধারণ করবেন এবং আসমানকে তাঁর ডান হাতে গুটিয়ে নিয়ে বলবেন, আমিই একমাত্র অধিপতি। দুনিয়ার বাদশাহরা কোথায়? (সহিহ বোখারি : ৭৩৮২) এই হাদিসের মাধ্যমে আল্লাহর রাজত্বের অমোঘ এবং অনন্ত শক্তি ফুটে উঠেছে।
প্রকৃত মালিক আল্লাহর চূড়ান্ত অধিকার
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো শক্তি বা রাজত্ব স্থায়ী নয়। আল্লাহর রাজত্বই চিরস্থায়ী এবং চিরন্তন, আর তিনিই পৃথিবীসহ সমগ্র সৃষ্টির প্রকৃত মালিক। মহিমান্বিত আল্লাহ, যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, সম্মানিত আরশের তিনিই অধিপতি (সুরা মুমিনুন : ১১৬)।
আল্লাহর ক্ষমতা ও রাজত্বই চূড়ান্ত, এবং তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কিছুই প্রতিহত হতে পারে না। তিনি আমাদের একমাত্র অভিভাবক ও সাহায্যকারী, এবং তিনি আমাদের পথ দেখান।