নামাজ ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ। যা প্রত্যেক মুসলিমের উপর দিনে পাঁচ বার আদায় করা ফরজ। তবে, নামাজ যদি কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত পন্থায় না আদায় করা হয়, তাহলে সেই নামাজ আদায় হবে না। তাছাড়া, যদি কেউ লোক দেখানোর জন্য নামাজ আদায় করে, তবে তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। এমনকি, এই নামাজই কিছু মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে।
তাই আজ আমরা জানবো এমন তিন শ্রেণির নামাজি সম্পর্কে যারা নামাজের কারণে পরকালে জাহান্নামে যেতে পারে।
১. যারা অলসতা করে সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করে না
এমন কিছু মানুষ আছে যারা নামাজের সময়কে গুরুত্ব না দিয়ে অলসতা করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নামাজ পড়েন না, তাদের নামাজ কবুল হবে না। তাদের জন্য পরকালে শাস্তি রয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
فَوَيۡلٌ لِّلۡمُصَلِّيۡنَۙ ٤ الَّذِيۡنَ هُمۡ عَنۡ صَلَاتِهِمۡ سَاهُوۡنَۙ ٥
অতঃপর দুর্ভোগ ওইসব মুসল্লির জন্য, যারা তাদের নামাজে উদাসীন। (সুরা মাউন, আয়াত : ৪-৫) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা লিখেছেন, এরা হচ্ছেন সেই সমস্ত লোক, যারা নামাজ থেকে উদাসীন ও খেল-তামাশায় ব্যস্ত। উদাসীন লোকদের মধ্যে একদল এমনও আছেন যারা রুকু-সিজদা, ওঠা-বসা যথাযথভাবে করেন না, কেরাত, দোয়া ও তাসবিহ ঠিকমতো পাঠ করেন না, এবং নামাজের প্রকৃত অর্থ বোঝার চেষ্টাও করেন না।
২. যারা দায়সারাভাবে নামাজ পড়ে
এরা হচ্ছেন সেই সমস্ত লোক, যারা নামাজের বিধি-বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করেন না ও নামাজ পড়ার সময় অমনোযোগী থাকেন। আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন, রসুল সা. মসজিদে প্রবেশ করলে একজন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ শেষে রসুল সা.-কে সালাম দিলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বলেন, ‘তুমি যাও, পুনরায় নামাজ আদায় করো, কেননা তুমি নামাজ আদায় করোনি। এভাবে লোকটি তিনবার নামাজ আদায় করল।
তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এর চেয়ে সুন্দরভাবে নামাজ আদায় করতে জানি না, দয়া করে আমাকে নামাজ শিখিয়ে দিন। অতঃপর রসুলুল্লাহ সা. তাকে নামাজের নিয়ম শিখিয়ে দেন এবং বলেন, এভাবে নামাজ আদায় করবে। (বুখারি, হাদিস : ৭৫৭)
এছাড়া, অন্য একটি হাদিসেও রসুল সা. বলেছেন,মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ওই ব্যক্তি যে তার নামাজে চুরি করে। (মুসনাদে আহামাদ, হাদিস : ২২৬৯৫) এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, নামাজের মধ্যে রুকু ও সিজদা পূর্ণভাবে না করা ও যথাযথভাবে নামাজ আদায় না করা নামাজ চুরি হিসেবে গণ্য হয়।
৩. যারা লোক দেখানো নামাজ আদায় করে
মুনাফিকরা সাধারণত লোক দেখানোর জন্য নামাজ পড়ে। তারা নামাজ পড়ার সময় সঠিকভাবে মনোযোগী না হয়ে, শুধু মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করে। কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِیۡنَ ہُمۡ یُرَآءُوۡنَ
ওই নামাজির জন্য ওয়াইলুন জাহান্নাম, যারা লোক দেখানোর নামাজ আদায় করে। (সুরা মাউন, আয়াত : ৬)
এছাড়া, আল্লাহ তায়ালা অন্য একটি আয়াতে বলেছেন,اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ یُخٰدِعُوۡنَ اللّٰہَ وَہُوَ خَادِعُہُمۡ ۚ وَاِذَا قَامُوۡۤا اِلَی الصَّلٰوۃِ قَامُوۡا کُسَالٰی ۙ یُرَآءُوۡنَ النَّاسَ وَلَا یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰہَ اِلَّا قَلِیۡلًا
নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়, আর তিনিও তাদের ধোঁকায় ফেলেন। যখন তারা নামাজে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায় লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। (সুরা নিসা, আয়াত : ১৪২)
এই তিন শ্রেণির মানুষের জন্য ইসলামে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, এবং তাদের আমল আল্লাহ তায়ালার দরবারে কবুল হবে না। এজন্য আমাদের উচিত নামাজকে সতর্কভাবে ও মনোযোগ সহকারে আদায় করা, যাতে আমরা পরকালে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যথাসময়ে সঠিক প্রদ্ধতিতে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন ।