ইসলাম ধর্মে মৌলিক মূল্যবোধের মধ্যে অন্যতম হলো জীবন রক্ষা ও হত্যাকাণ্ডের নিষেধাজ্ঞা। কোনো নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা শুধু একটি আইনগত অপরাধ নয়, বরং এটা সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় বটে। ইসলামে হত্যাকে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কুরআন ও হাদিসে হত্যার তীব্র নিন্দাও করা হয়েছে এবং এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
কুরআনে হত্যার বিধান
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাষায় বলেছেন, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা কর না’।(সুরা বনি ইসরাইল ৩৩) আবার অন্যায়ভাবে হত্যাকাণ্ডের তুলনা করে বলা হয়েছে,‘যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে হত্যার বিনিময় অথবা ভূপৃষ্ঠে ফ্যাসাদ সৃষ্টির কারণ ছাড়া অন্যায়ভাবে হত্যা করলো সে যেন সকল মানুষকেই হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি কাউকে অবৈধ হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা করলো সে যেন সকল মানুষকেই রক্ষা করলো’। ( সুরা মায়িদা,আয়াত: ৩২)
হাদিসে হত্যার বিধান
হাদিস শরীফেও হত্যাকাণ্ডকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করা হয়েছে। নবিজি সা. বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মানবাধিকার সম্পর্কিত সর্বপ্রথম হিসাব হবে রক্তের’। (বুখারি শরিফ, হাদিস: ৬৫৩৩) অর্থাৎ কেয়ামতের দিন সবচেয়ে প্রথম হিসাব হবে হত্যার।
হত্যাকারীর শাস্তি
ইসলামে ইচ্ছাকৃতভাবে একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে হত্যা করাকে মহাপাপ সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং এর জন্য জাহান্নামে শাস্তির কঠোর বিধান রয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম। তার মধ্যে সে সদা সর্বদা থাকবে এবং আল্লাহ্ তায়ালা তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন ও তাকে অভিশাপ দেবেন। তেমনিভাবে তিনি তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ভীষণ শাস্তি’। (সুরা নিসা, আয়াত: ৯৩)
হত্যাকারীর তওবা
কিছু লোক হত্যাকারীর তওবা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এই বিষয়ে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘হত্যাকৃত ব্যক্তি হত্যাকারীকে সঙ্গে নিয়ে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার সামনে উপস্থিত হবে। হত্যাকৃত ব্যক্তির মাথা তার হাতেই থাকবে। শিরাগুলো থেকে তখন রক্ত পড়বে। সে আল্লাহ তায়ালাকে উদ্দেশ্য করে বলবে, হে আমার প্রভু! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। এমনকি সে হত্যাকারীকে আরশের অতি নিকটেই নিয়ে যাবে’।
শ্রোতারা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে হত্যাকারীর তওবা করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সুরাহ নিসার ৯৩ নম্বর আয়াতটি তিলাওয়াত করে বললেন, উক্ত আয়াত রহিত হয়নি। পরিবর্তনও হয়নি। অতএব তার তওবা কোনো কাজেই আসবে না। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৩০২৯)
ইসলামি বিধান অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ড শুধু একটি অপরাধ নয়, এটা সমাজে বিশৃঙ্খলা, অস্থিরতা এবং মানবতার প্রতি অবিচারের পরিচায়ক। হত্যার শাস্তি শুধু দুনিয়াতেই নয়, আখিরাতেও অত্যন্ত কঠোর। তাই ইসলামে এই হত্যাকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে হত্যা মতো জঘন্য পাপ থেকে বিরত রাখুন। আমিন।