রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশ ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত বিস্তৃত কৌশলগত চুক্তিতে আইনি স্বাক্ষর করেছেন। এর ফলে এই চুক্তি এখন রাশিয়ায় পূর্ণ আইনি বৈধতা পেল। এর আগে চলতি এপ্রিল মাসে রাশিয়ার সংসদের দুই কক্ষ—স্টেট ডুমা ও ফেডারেশন কাউন্সিল—চুক্তিটির অনুমোদন দেয়।
ইরানভিত্তিক গণমাধ্যম পার্স টুডে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান রাশিয়া সফরকালে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির লক্ষ্য—দীর্ঘমেয়াদে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এমন এক স্তরে উন্নীত করা, যা দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও সুসংহত করবে।
এই চুক্তির আওতায় রাশিয়া ও ইরান প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, অর্থনীতি, কৃষি, পরিবহন, শিল্প, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের কাঠামো গড়ে তুলবে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এই চুক্তি দুই রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক ও পারস্পরিক নির্ভরতার বার্তা বহন করছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন চুক্তিতে স্বাক্ষর করায় এখন রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। পরবর্তী ধাপ হলো—ইরানের সংসদে চুক্তির অনুমোদন, যার পরেই এটি কার্যকর হবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি সম্প্রতি রাশিয়া সফরকালে রাশিয়া টুডে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমাদের সংসদও এই চুক্তিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অনুমোদন সম্পন্ন হবে বলে আমি আশা করি।”
তিনি আরও বলেন, “এই বিস্তৃত কৌশলগত চুক্তি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়—ইরান ও রাশিয়া স্বল্পমেয়াদি সংকট নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ওপর জোর দিচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয় যে দুই দেশ নিজেদের জাতীয় স্বার্থে একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চুক্তি শুধু ইরান-রাশিয়া সম্পর্ক নয়, বরং আঞ্চলিক ও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা ও চাপের মুখে দুই দেশই তাদের নিজস্ব মিত্র গড়ে তোলার পথে এগোচ্ছে।
এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ইরান ও রাশিয়া এমন এক জোট গড়ে তুলতে যাচ্ছে, যেটি ব্রিকস (BRICS), সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO) ও অন্যান্য বিকল্প অর্থনৈতিক প্ল্যাটফর্মেও নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়। এমনকি চুক্তিটির কাঠামো পর্যবেক্ষণ করে অনেকেই একে চীন-রাশিয়া-ইরান ট্রায়াঙ্গেলের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখছেন।
তবে পশ্চিমা বিশ্ব এই চুক্তিকে কৌশলগত উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে পৃথকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। এখন দুটি নিষিদ্ধ রাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ অংশীদার হয়ে ওঠায় ভিন্ন কূটনৈতিক ও সামরিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে আগামী কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরেশিয়া অঞ্চলে শক্তি ও প্রভাবের নতুন ধারা তৈরি হবে, যেখানে পশ্চিমা চাপ মোকাবিলায় ইরান ও রাশিয়া একে অপরের কৌশলগত সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এটা শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার দিক থেকেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?