“আমি কোনো বেআইনি কাজ করিনি, এটা নিছক রাজনৈতিক হয়রানি”—বাংলাদেশে নিজের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্রিটিশ এমপি ও শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক। ঢাকার অভিজাত কূটনৈতিক এলাকায় জমি বরাদ্দের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দাখিল করা মামলায় সম্প্রতি আদালত টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। অভিযোগে বলা হয়, তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায় সরকারি জমি বরাদ্দ নিয়েছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক এক বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ কখনো আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। শুরু থেকেই মিডিয়ার মাধ্যমে আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। আমার আইনজীবীরা নিজেরা চিঠি পাঠিয়েছেন, কিন্তু সেখানেও কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এই রাজনৈতিক অপবাদ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানির চেষ্টা। আমি কোনো বেআইনি কাজ করিনি, তার একটুও প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না।”
এই বিষয়ে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য সানডে টেলিগ্রাফ জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগ অনুযায়ী টিউলিপ সিদ্দিক ঢাকার বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায় ৬৭০ বর্গমিটার জমি পেয়েছেন তার খালা শেখ হাসিনার সুপারিশে। অভিযোগ আরও, একইভাবে জমি বরাদ্দ পেয়েছেন তার মা শেখ রেহানা, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী। তারা সবাই বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।
তবে টিউলিপের পক্ষে এক প্রতিনিধি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “এই মামলায় কোনো আইনি ভিত্তি নেই। জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ।”
এদিকে যুক্তরাজ্যের নৈতিকতা বিষয়ক উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস সম্প্রতি জানিয়েছেন, টিউলিপ সিদ্দিকের ব্যক্তিগত সম্পদ, সম্পত্তির উৎস বা ব্যবহার নিয়ে কোনও ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ড বা নীতিমালা লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, “কিছু জমির রেকর্ড সময়মতো আপডেট না থাকলেও তা অপরাধের ইঙ্গিত দেয় না।”
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ ট্রেজারির অর্থনৈতিক সচিব পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পেছনে তিনি পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত বিতর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমি চাইনি আমার পরিবারের বিষয় নিয়ে সরকারকে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হোক।”
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এখনো কোনো প্রত্যর্পণ চুক্তি (extradition treaty) না থাকলেও, দুদক সূত্র বলছে তারা টিউলিপ সিদ্দিককে বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইবে।
এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ও আন্তর্জাতিক মহলে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। একদিকে বিষয়টিকে বর্তমান সরকারের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা, অন্যদিকে টিউলিপের মতো একজন আন্তর্জাতিক রাজনীতিককে এভাবে মামলার জালে ফাঁসানো কতটা যৌক্তিক—সে নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে ব্রিটেনের লেবার পার্টির হয়ে পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং দেশটির মূলধারার রাজনীতিতে বেশ সক্রিয়। তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা লেবার নেতা কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী বলেও পরিচিত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি শুধু ব্যক্তি টিউলিপ সিদ্দিককে ঘিরে নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিদেশে অবস্থানকারী ক্ষমতাসীন পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত নতুন এক কৌশল বলেও ধরা যেতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কতদূর যেতে পারে—তা এখন সময়ই বলবে।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?