সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, বিশেষ বিমানে রবিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের কিং খালিদ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট। তার সফরসঙ্গী হিসেবে আছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানি। বিমান বন্দরে তাদের স্বাগত জানান রিয়াদের ডেপুটি গভর্নর আব্দুলরহমান বিন আব্দুলআজিজ।
পরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন আল শারা। তার আগে তাকে রাজকীয় অভ্যর্থনা দেন সৌদি যুবরাজ। শারা-সালমানের বৈঠকটি সফল ও আন্তরিক ছিল বলে জানিয়েছে সানা।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত দুই দেশের যৌথ স্বার্থ ও সিরিয়া পুনর্গঠনে সৌদি আরব কীভাবে সহায়তা করতে পারে, সে সব নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যেই আল-শারার এই সফর।
বৈঠক শেষে শারা জানান, নতুন দিনের যাত্রায় সিরিয়ার পাশে থাকার ব্যাপারে খুবই আন্তরিক আগ্রহ দেখিয়েছেন সৌদি যুবরাজ। আলোচনায় জ্বালানি, প্রযুক্তি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে পারস্পরিক সহায়তার বিষয়গুলোও উঠে এসেছে বলে জানান তিনি।
আল জাজিরার বিশ্লেষক ওসামা বিন জাভিদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে সিরিয়ার গুরুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই এই সফরে বেরিয়েছেন আল-শারা।
বাসার আল আসাদকে উৎখাত করে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকেই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন বিদ্রোহীদের সাবেক এই নেতা। একই সাথে সিরিয়ার ওপর থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্যও জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া পুনর্গঠনে এই মুহূর্তে প্রয়োজন বিপুল সহায়তা। সে ক্ষেত্রে উপসাগরীয় দেশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক বিশ্লেষকের মতে, শারার এই সফর বাশার আলা আসাদ সরকারের মিত্র ইরান ও রাশিয়ার প্রতিও এক বার্তা। এতো দিন এই দুই দেশ নানা ভাবে সিরিয়াকে ব্যবহার করলেও, আগামীতে তা আর সহজ হবে না, সম্ভবত সেই বার্তাও দিতে চাইছেন দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট। তারই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সৌদি আরবকে বেছে নেয়া। এতে করে আগামীতে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে তৈরি হতে পারে নতুন সমীকরণ।
এদিকে এরই মাঝে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট ইন সিরিয়া- আইআরএফএস’ নামে নতুন একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সন্ত্রাসী অভিহিত করে হামলার হুমকি দিয়েছে তারা। এই গোষ্ঠীটি ইরানের মদদপুষ্ট বলে অভিযোগ রয়েছে।
কোনো কোনো বিশ্লেষকের আশঙ্কা, এই প্রেক্ষাপটে আবারও গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে সিরিয়ায়। সম্ভাব্য তেমন পরিস্থিতি সামাল দিতে সমর্থন আদায়ের অংশ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ আল শারার এই সফর।