ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জাল স্বাক্ষরযুক্ত নথির মাধ্যমে তার বোনের কাছে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট হস্তান্তরের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে, টিউলিপ সিদ্দিক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ওই ফ্ল্যাট অবৈধভাবে অধিগ্রহণ করেছিলেন।
দুদকের অনুসন্ধান বলছে, টিউলিপ সিদ্দিক ঢাকার পূর্বাচলে সরকারি প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রেও অনিয়ম করেছেন। সংস্থাটির দাবি, গুলশানের ফ্ল্যাটটি নিজের বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে হস্তান্তর করতে তিনি একটি জাল নোটারি নথি ব্যবহার করেন, যেখানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের সিল ছিল, কিন্তু স্বাক্ষর ছিল জাল। আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তিনি শুধু নিজের চেম্বারে বসে নোটারি কার্যক্রম সম্পাদন করেন এবং টিউলিপ কিংবা আজমিনার সঙ্গে তার কোনো পূর্বপরিচয় নেই।
দুদক জানিয়েছে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা পূর্বাচলের নিউ টাউন প্রকল্পে ৬০ কাঠা (প্রায় এক একর) সরকারি জমি অবৈধভাবে বরাদ্দ নিয়েছিলেন। টিউলিপের মালিকানায় ঢাকায় আরেকটি সম্পত্তি থাকার কারণে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের নিয়ম অনুযায়ী তিনি এর যোগ্য ছিলেন না। তবে, নিয়ম লঙ্ঘন করে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা সেখানে জমি বরাদ্দ পেয়েছেন।
দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, “এটি হিমশৈলর চূড়ামাত্র। বর্তমানে দুদকে আরও অনেক অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে, যা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির চিত্র উন্মোচন করবে।” সংস্থাটি বলছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এবং দুর্নীতির ঘটনায় শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে আরও বৃহত্তর তদন্ত চলছে।
দুদকের অভিযোগের বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের মুখপাত্র বলেন, “এই অভিযোগগুলোর পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি এবং তিনি এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।”
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য এবং দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের “সিটি মিনিস্টার” হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এবং তদন্তের বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও গুরুত্বসহকারে প্রচারিত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তাদের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, যুক্তরাজ্যের মতো একটি দেশে বসবাসকারী একজন রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং অবৈধ সম্পত্তি অধিগ্রহণের অভিযোগ তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে, এবং শিগগিরই তার বিরুদ্ধে নতুন করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। যদিও যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী তিনি সেখানে কোনো অপরাধ করে থাকলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করতে পারে, তবে বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সময় কোনো বিষয় নয়, নিরপেক্ষ নির্বাচনই আসল কথা। তাঁর এই বক্তব্যে আপনার সমর্থন আছে কি?