বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে সম্প্রতি উঠে এসেছে একটি নতুন বিতর্ক, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে, এই প্রকল্পের দুর্নীতির টাকায় বিদেশে ফ্ল্যাট কেনার একটি চক্র সক্রিয় ছিল। অভিযোগ উঠেছে, রূপপুর প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অবৈধভাবে অর্থ সংগ্রহ করে সেই টাকা ব্যবহার করে লন্ডনে ফ্ল্যাট কিনেছেন।
এই ফ্ল্যাটটি টিউলিপ সিদ্দিকের নামে রেজিস্টার করা হয়েছে, যিনি একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং ব্রিটেনের পার্লামেন্ট সদস্য।
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প বাংলাদেশে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, যেখানে রাশিয়ার সহায়তায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। তবে প্রকল্পের কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষভাবে, প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে অস্বাভাবিক খরচ, অনুমোদনের বাইরে অর্থ প্রদান এবং অবৈধ লেনদেনের তথ্য প্রকাশ পায়।
এই দুর্নীতি সম্পর্কিত একাধিক তদন্তের পর উঠে আসে একটি নাম—টিউলিপ সিদ্দিক। অভিযোগ করা হয়, রূপপুর প্রকল্পে ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে যে টাকার লেনদেন হয়েছিল, তার একটি বড় অংশ ব্যবহার করা হয়েছে লন্ডনে ফ্ল্যাট কেনার জন্য।
টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনে একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। তিনি লন্ডনের হ্যামস্টেড এবং কিলবার্ন নির্বাচনী এলাকা থেকে পর পর কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিছু দিন আগে তার বিরুদ্ধে রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতির টাকায় লন্ডনের ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগ উঠেছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
তবে, সিদ্দিক এখনও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, এই ধরনের কোনও অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি দাবি করেছেন যে, তার সম্পত্তি আইনগতভাবে কেনা এবং তার সবকিছু স্বচ্ছ।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলে এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকার লেনদেনের ঘটনা জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রূপপুর প্রকল্পের মতো বড় মাপের প্রকল্পে দুর্নীতি হওয়া দেশটির উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে এবং দেশের ইমেজকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তারা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন করে দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ এমপি ও শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের মালিকানাধীন ৭ লাখ পাউন্ডের লন্ডনের একটি ফ্ল্যাটের উৎস নিয়ে তদন্ত চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে পাচার করা টাকার একটি অংশ দিয়ে সেটি কেনা হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি ঢাকতে সেটি উপহার পাওয়ার নাটক সাজায় শেখ পরিবার।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ তদন্ত করছে। দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর একটির সাথে যুক্ত তহবিল ব্যবহার করে টিউলিপ লন্ডনের সম্পত্তি কিনেছিলেন কি না, সে প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে দুদক। দ্য টেলিগ্রাফ এমন তথ্য জানায়।
তদন্তের এক আপডেটে দুদক বলেছে, তারা অভিযোগ পেয়েছে যে টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনে ৭০০,০০০ পাউন্ডের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট পেয়েছেন। ফ্ল্যাটটি বাংলাদেশের ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলারের (১০.১ বিলিয়ন পাউন্ড) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আত্মসাৎ করা অর্থের একটি অংশ দিয়ে কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, হাসিনার ঘনিষ্ঠ মহলের সদস্যদের জন্য উচ্চমূল্যের সম্পত্তি অর্জনের আগে মালয়েশিয়ার অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ পাচার করা হয়। এরপর সেটি বিভিন্ন চ্যানেল ঘুরে লন্ডনে পাঠানো হয়।
দুদকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, আমাদের গোপন তদন্তে এই অভিযোগগুলো নিশ্চিত হওয়ার পর, আমরা এটির একটি প্রকাশ্য তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি (টিউলিপ) দুর্নীতি এবং আর্থিক অসদাচরণের অভিযোগে জড়িত। আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তিনি বাংলাদেশে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যুক্ত অর্থ পাচার এবং অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িত ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মাধ্যমে টিউলিপ ও তার পরিবারের সদস্যরা ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন। এ প্রকল্পের ৯০ শতাংশ ঋণ এসেছে ক্রেমলিন থেকে, আর দায়িত্বে আছে রাশিয়ান কোম্পানি রোসাটম।
এর সূত্র ধরে টিউলিপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পেয়েছেন কি না সেটিই এখন তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ বছরের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বছরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনিও মনে করেন?