জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমকে নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সরাসরি সম্প্রচারিত (লাইভ) অনুষ্ঠানে অশালীন মন্তব্য করার ঘটনায় সাংবাদিকদের বরখাস্ত করা হয়েছিল। তবে এবার সেই বরখাস্ত হওয়া সংবাদ উপস্থাপিকাসহ বাকি দুই সাংবাদিকের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই দাবি জানান। পোস্টে তিনি লেখেন, “এখন টিভির সাংবাদিকদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা এই দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্যই আন্দোলন করেছিলাম। আমরা এই গালির স্বাধীনতার জন্যই আন্দোলন করেছিলাম। শুধু মতপ্রকাশ নয়, দ্বিমত প্রকাশও অব্যাহত থাকুক।”

একই পোস্টের কমেন্ট বক্সে তিনি আরও লেখেন, “গালি” দেওয়ার প্রেক্ষিতে এখন টিভির তিনজন সাংবাদিককে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় আমি বিব্রত। রাজনীতিবিদদের যাতে স্বাধীনভাবে সমালোচনা করা যায় সেই অধিকারের জন্যই আমরা আন্দোলন করেছি। এখনও করছি। আমাদের এই লড়াই একটা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার লড়াই, যেখানে যেকোনো মানুষ রাজনীতিবিদদের উচিত বা অনুচিত সমালোচনা করতে পারবে। তবে প্রত্যাশা থাকবে সেটি হবে গঠনমূলক উপায়ে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর, সেই মত আমার বিরুদ্ধে হলেও।”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যাওয়া শিশুটির জানাজায় অংশ নিতে যান এনসিপির দুই নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। ওই সময় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের লাইভ সম্প্রচারের সময় দুই উপস্থাপকের মধ্যে কথোপকথনের একপর্যায়ে একজন উপস্থাপিকা হাসনাত ও সারজিসকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন, যা সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
এই ঘটনাটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে ওই উপস্থাপিকাসহ আরও দুইজনকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়। টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানা গেছে, সাংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তবে এনসিপির শীর্ষনেতার পক্ষ থেকে এই বরখাস্তের প্রতিবাদ আসায় বিষয়টি নতুন মোড় নিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অবস্থান গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের অধিকারের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
এদিকে, এখন টিভির পক্ষ থেকে বরখাস্ত হওয়া সাংবাদিকদের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং শিগগিরই টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে।
সাংবাদিকদের অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমকর্মী ও বিশিষ্টজনেরা সাংবাদিকদের স্বাধীন মতপ্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করতে আরও উন্মুক্ত নীতিমালার দাবি জানাচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হাসনাত আব্দুল্লাহর এই অবস্থান রাজনৈতিক সৌজন্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?