পিরোজপুরের নাজিরপুরে বিএনপির এক নেতা এবং দুই কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্রিজের রড চুরি করে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার গভীর রাতে পিরোজপুর জেলা বিএনপির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বহিষ্কৃতদের মধ্যে রয়েছেন নাজিরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি সরদার সাফায়েত হোসেন শাহিন, বিএনপি কর্মী মো. হেদায়েত হোসেন এবং জাহিদুল ইসলাম। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তাদের সব ধরনের সাংগঠনিক পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী ওহিদুজ্জামান লাভলুর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএনপি জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক সংগঠন। কোনো অপকর্মকারী বা দুর্নীতিবাজকে দলে স্থান দেওয়া হবে না। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যে কেউ কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হবেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সোমবার গভীর রাতে হামিদিয়া কারিমিয়া জামে মসজিদসংলগ্ন খালের ওপর নির্মিত একটি ব্রিজ থেকে রড খুলে নিয়ে যায় সরদার সাফায়েত হোসেন শাহিন ও তার সহযোগীরা। এলাকাবাসীর নজরে আসার পর তারা ঘটনাটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনকে জানান। এলাকাবাসীর মতে, দুদিন আগেও ব্রিজটি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল, অথচ রাতের আঁধারে হঠাৎ করে বিএনপি নেতার নেতৃত্বে সেটির লোহার রড খুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম হেকমত জানান, রাতের বেলা খবর পেয়ে কয়েকজন গ্রামবাসী নিয়ে পাহারা দেওয়া হয়েছে। তার দাবি, বিএনপি নেতা শাহিন এবং তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এবার তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি চুরির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে এবং নাজিরপুর থানায় আনুষ্ঠানিক মামলা করা হয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, যারা দলের নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে চায়, তাদের বিএনপিতে কোনো জায়গা নেই। বিএনপি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য রাজনীতি করে, লুটপাট বা চুরি করার জন্য নয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন যে, কেউ যদি দলে থেকে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ব্রিজ চুরির ঘটনায় স্থানীয়দের ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। এলাকাবাসী অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেছেন, বিএনপি নেতাদের কাছে এই ধরনের কর্মকাণ্ড কখনোই প্রত্যাশিত নয়। তারা চান, যারা জনগণের সম্পদ লুট করেছে, তাদের আইনানুগ বিচার হোক। অন্যদিকে, বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলেছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা এমন অপরাধে লিপ্ত হয়েছে, তাদের দলে থাকার কোনো অধিকার নেই।
এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন স্থানীয় কমিটি বলেছে, যারা দলে থেকে দলের আদর্শের পরিপন্থী কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে বিএনপি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, দলীয় শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার প্রশ্নে কোনো আপস নেই। যারা দলের সুনাম ক্ষুণ্ন করবে, তারা বিএনপিতে জায়গা পাবে না। জনগণের স্বার্থ রক্ষাই বিএনপির মূল লক্ষ্য এবং সে লক্ষ্যে কেউ বাধা হলে, তাকে শাস্তি পেতেই হবে।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?