রাষ্ট্রযন্ত্রকে নগ্নভাবে ব্যবহার ও দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মাঠে নামিয়ে গণহত্যা চালিয়েও ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। ১৬ বছরের গুমখুন, লাগামহীন লুটপাট, দুর্নীতি, আয়নাঘর ও দমনপীড়নের কারণে জনরোষ থেকে বাঁচতে গোপনে দেশছাড়ে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতা। দেশে থাকা বাকি নেতারাও চলে যায় আত্মগোপনে।
নারকীয় সব অপরাধের শাস্তি এড়াতে ও তাৎক্ষণিক রোষাণল থেকে বাঁচতে বিদেশে পালিয়ে গেলেও চুপ করে বসে নেই মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ। ভয়াবহ গণহত্যার জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা ও ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়াই আরো ধ্বংসাত্মক উপায়ে ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দলটি। সর্বশেষ হাসিনার গেল ৫ ফেব্রুয়ারির অনুশোচনাহীন ও উস্কানিমূলক ভাষণ তেমনটাই প্রমাণ করে। এতে নতুন করে ছাত্রজনতার মাঝে গণহত্যাকারী দলটি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও ঘৃণার বিস্ফোরণ ঘটে।
খুনি হাসিনা ভারতে বসে দিল্লির সহায়তায় একের পর এক এভাবেই কুটচাল ও উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন। দেশকে অস্থিতিশীল করতে নাশকতার কলকাঠি নাড়ছে প্রতিনিয়ত। ক্ষমতালোভী হাসিনা তার লুটপাট ও গুমখুনের সাম্রাজ্য ফিরে পেতে এখন মরিয়া।
অন্যদিকে, হাসিনাকে পুনর্বাসন করে হারানো আধিপত্যবাদ ফিরে পেতে নির্লজ্জভাবে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে ভারত। ফ্যাসিস্ট দোসররা সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রজনতাকে লাগামহীনভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। নানাভাবে বার্তা দিচ্ছে আরও ভয়ঙ্কর রূপে ফেরার।
সম্প্রতি ২৪’ এর পরাজিত শক্তি তাদের প্রভুদেশ ভারতের মদদে বাংলাদেশকে জঙ্গি ও মব রাষ্ট্র প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এতে ব্যয় করা হচ্ছে ১৬ বছরের শাসনামলে লুটপাট করা বিপুল অবৈধ অর্থ। ভারতীয় নীল নকশা অনুযায়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নেমে পড়েছে গণহত্যাকারারী। বিপুল ব্যয়ে গুজব সেল তৈরি করে বিশ্বের কাছে ড. ইউনূসের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে ভারতের সাথে যৌথভাবে প্রোপাগাণ্ডা চালানো হচ্ছে।
হাসিনাকে ফেরাতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, ভারত সরকার ও ভারতীয় মিডিয়া এবং দেশি-বিদেশি দোসর মিডিয়া ও তথাকথিত সুশীলরা একযোগে মাঠে নেমেছে। তারা একইসুরে কথা বলছে এবং একই বয়ান প্রতিষ্ঠায় লিপ্ত রয়েছে। এখন সময় এসেছে গণহত্যাকারীদের আস্ফালন কঠোরভাবে মোকাবেলার। চিহ্নিত খুনি-লুটেরাদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই স্থিতিশীলতা ফিরতে পারে বলে মত নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।
জানা যায়, নানানরূপে প্রতিবিপ্লবে ব্যর্থ হয়ে এবার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে ভারত ও আওয়ামী লীগ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ড. ইউনূস সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে শুরু হয়েছে দেশ ও ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র। মুখে সুসম্পর্ক গড়ার বার্তা দিলেও তলে তলে একাজে আওয়ামী লীগকে সর্বাত্মক সহায়তা করছে ভারত। কারণ ড. ইউনূসকে দুর্বল করতে পারলেই আগ্রাসন চালাতে সুবিধা হবে দিল্লির। প্রশস্ত হবে হাসিনাকে পুনর্বাসনের পথ।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, মেগা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একদিকে ষড়যন্ত্র ও কুটচাল দিয়ে ছাত্রজনতাকে উস্কে দেয়া হচ্ছে। আর এতে জনরোষের বিস্ফোরণ ঘটলে মব জাস্টিসের অভিযোগ তুলে প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে কথিত সুশীল ও ভারতীয় মিডিয়া। ইতোমধ্যে কিছু মবের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার তথ্যও সামনে এসেছে। অন্যদিকে এসব ঘটনায় সুশীললীগ ও ভারতীয় মিডিয়ার প্রতিবাদের ভাষা ও স্ক্রিপ্ট যেন একইসূত্রে গাঁথা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ক্ষমতার নিকৃষ্টতম অপব্যবহার করা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা আর সম্ভব নয়। প্রথমত, ১৬ বছরের নারকীয় সব অপকর্মের কারণে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দলটির রাজনীতিতে ফেরা অসম্ভব। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান শতভাগ দলীয়করণ করে সর্বোচ্চ কতৃত্ববাদী ক্ষমতা উপভোগ করেও ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গদি রক্ষা করতে পারেনি হাসিনা। সেই আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কার্যক্রম দিয়ে ফেরার চেষ্টা করলে এবার কবরেই ঢুকতে হবে দলটিকে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মত দিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে দূর ভবিষ্যতে রাজনীতিতে ফিরতে হলে একটা দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হবে। গণহত্যাসহ গুরুতর সকল অপরাধের বিচার সম্পন্ন, অপকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, বর্তমান নেতৃত্ব ও নাম বদলের মতো আবশ্যিক বাস্তবতাগুলোকে মোকাবেলা করে আসতে হবে। এর বাইরে ইসলামবিদ্বেষী ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে তার ওপর দিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে চাইলে এবার পুরোপুরি সমাধিস্থ হতে হবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে।
বিশ্লেষকরা আরও বলেন, বিদেশী প্রভুদের সহায়তায় ইসলামবিরোধী ও জঙ্গিকার্ড খেলেও আওয়ামী পুনর্বাসন সম্ভব নয়। কারণ ২৪’ এর গণঅভ্যুত্থান হয়েছে ধর্মবর্ণ, দলমত, শ্রেণি-পেশা, ডানবাম নির্বিশেষে ছাত্রজনতার ঐক্যবদ্ধ ও স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে। তাই আগ্রাসী রাষ্ট্র ভারত চাইলেও আর এদেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবে না তাদের সেবাদাস এই জনধিক্কৃত দলটিকে।
সম্প্রতি, বিতর্কিত ইসলামবিদ্বেষী লেখিকা তসলিমা নাসরিনের লেখা নিষিদ্ধ বই এবারের বই মেলাতে এনে পরিকল্পিতভাবে উত্তেজনা তৈরি করা হয়। আর এখানেই ছিলো ভারতের বিশেষ প্ল্যান। এমনটিই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তার লেখায় সব সময়ই প্রকাশ পায় ইসলাম বিদ্বেষ। বারবার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে উলঙ্গ সব কবিতা-উপন্যাস লেখেন এই লেখক। বই মেলার একটি স্টলে তসলিমা নাসরিনের লেখা ‘চুম্বন’ নামের একটি বই পাওয়া যায়।
এই বইটিকে ঘিরেই মেলা প্রাঙ্গণে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। একদল শিক্ষার্থী সব্যসাচী নামের সেই স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি করা দেখে সেখানে ভিড় করেন। শতাব্দী ভব নামে আওয়ামীপন্থী একজন লেখক তখন সেখানেই বসে ছিলেন। তসলিমা নাসরীনের বই বিক্রি কেন করছেন শিক্ষার্থীরা জানতে চাইলে তাদেরকে জঙ্গী বলে আখ্যা দেন এ লেখক।একপর্যায়ে জয় বাংলা স্লোগান দেন তিনি আর এতেই শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
‘জয় বাংলা’ স্লোগান শুনে এ সময় দর্শনার্থীরাও ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘স্বৈরাচারের দালালেররা, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। মূলত এখানেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। হঠাৎ করে বই মেলায় কেন নিষিদ্ধ তসলিমা নাসরিনের বই থাকবে? আবার সেখানে বসে থাকবেন একজন আওয়ামী পন্থী লেখক? বিষয়গুলো পরিকল্পিত।
ছাত্র-জনতাকে উস্কে দেয়ার জন্যই এমন পরিকল্পনা করেছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। যাতে করে বইমেলায় একটা বড় ধরণের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। আর মব জাস্টিসকে প্রতিষ্ঠা করে ইউনূস সরকারকে বেকায়দায় ফেলা যায়।
এদিকে, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফির বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার মধ্য দিয়ে হাসিনা ও ভারতের মব তৈরির ষড়যন্ত্র আরও স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। সামনে এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কাফি দাবি করেছেন, ধানমন্ডি ৩২ পোড়ানোর ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই প্রথমে তার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি কথা বলেছি, মানুষের পক্ষে কথা বলেছি। শেখ হাসিনা বলেছেন, ধানমন্ডি যারা পুড়িয়েছে, তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হবে। আর ঠিক সেই প্রতিশোধ হিসেবেই আমার বাড়ি প্রথমে পুড়েছে।এ সময় কাফি দাবি করেন তার বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনায় আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ জড়িত।
কাফির দাবিকে ছোট করে দেখতে নারাজ অনেকেই। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই সতর্ক করেছেন, সরকার কঠোর না হলে দেশে ধ্বংসযজ্ঞে নেমে পড়বে আওয়ী লীগের দোসররা।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সম্প্রতি বলেন, হঠাৎ গত তিন-চার মাসে আমরা মব জাস্টিসের আলোচনা এত বেশি শুনছি যে, আমরা সুইজারল্যান্ডে ছিলাম গত ছয় মাসে আমরা উগান্ডা হয়ে গেছি। বাস্তবতা এরকম না। আমরা ১৬ বছর ধরে মব জাস্টিসের মধ্যেই আছি।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতি গত ১৬ বছর ধরে তৈরি করছেন। তৈরি করে হঠাৎ আপনি আশা করছেন, আমি ছয় মাসে ফেরেশতা হয়ে যাব। এটা এমন যে, একটা ৪০ বছরের পেশাদার ডাকাত ছয় মাসে সে ফেরেশতা হয়ে যাবে। এই রাষ্ট্র গত ১৬ বছরে ডাকাতদের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে পুলিশ দিয়ে র্যাব দিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে। পাড়া-মহল্লায় যে শত শত আয়নাঘর বানানো হয়েছে। এটা কি মব জাস্টিস ছিল না?

‘ছাত্র-জনতা হত্যার সম্পূর্ণ বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজনীতি করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত’ আপনি কি সমর্থন করেন?