বাংলাদেশের আয়তন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ পদ্মা, মেঘনা ও বদ্বীপ অঞ্চলে বিগত বছরগুলোতে প্রায় ৫০টিরও বেশি দ্বীপ জেগে উঠেছে। আর এগুলো মিলে হিসেব করলে গোটা একটি দেশের চেয়ে বড় ভূখণ্ড পাচ্ছে বাংলাদেশ, যা ইতোমধ্যেই মানুষের বসবাস উপযোগী হয়েছে। এর ফলে এই দিক থেকে বাংলাদেশের আয়তন বেড়ে গিয়েছে।
মূলত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আয়তন বেড়ে চলেছে। যখন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের বিরাট অংশ সাগরে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঠিক সে সময়ই বঙ্গোপসাগরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চেয়েও বড় ভূখণ্ড পাচ্ছে বাংলাদেশ।
সমুদ্রের অথই জলে প্রাকৃতিকভাবে বিশাল বিশাল চর জেগে উঠছে, গড়ে উঠছে মাইলের পর মাইল ভূখণ্ড। দীর্ঘদিন ধরে শুধু ডোবার চর হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকটি চর ভূমি ইতোমধ্যেই স্থায়ী ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে দুই-তিন বছর ধরে জেগে থাকা এসব দ্বীপখণ্ড ভরা জোয়ারেও আর তলিয়ে যাচ্ছে না। বরং বাংলাদেশকে ডুবাতে ভারত যে পানি ছেড়ে দিচ্ছে, তা যেন আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ। সুদূর ভুটান, নেপাল, হিমালয় থেকে নদীগুলো উৎপন্ন হয়ে পথে প্রায় এক বিলিয়ন মেট্রিক টন পলি বা সেডিমেন্ট বয়ে এনে বঙ্গোপসাগরে ফেলছে। যার বেশিরভাগ পলি মহিসোপান পার হয়ে গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছে। আর এখান থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন চর বা দ্বীপ।
এদিকে, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের ভোলায় আঘাত হানে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় — সাইক্লোন ভোলা। সেই ’৭০-এর সাইক্লোনের পর বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠে একটি দ্বীপ — নিউমুর বা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ। আর এই দ্বীপ নিয়ে তখন শুরু হয় ভারত-বাংলাদেশের বিভাজন।
ভূ-বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ তালপট্টির মাটির নিচে বিপুল পরিমাণ গ্যাস, কয়লা ও খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার থাকার কারণেই ভারত ও বাংলাদেশের আগ্রহ ছিল। এছাড়াও, দ্বীপের আকার বেড়ে গেলে তা বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করত।
বিবাদমান বিরোধের মধ্যেই বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দ্বীপটি বাংলাদেশের দাবি করে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও স্যাটেলাইট ছবি পেশ করেন। কিন্তু তাতেও মানতে নারাজ ভারত। এরপর ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ পাঠায় এবং সেখানে বিএসএফ (সীমান্তরক্ষী বাহিনী) চৌকি স্থাপন করে।
তবে বসে থাকেনি বাংলাদেশ। কোস্টগার্ডে দুটি গানবোট প্রেরণ করে। এরপর অস্ত্রের যুদ্ধে না জড়িয়ে ভারত দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় এবং দ্বীপটিকে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ ঘোষণা করে।
তবে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে এই দ্বীপটি ছিনিয়ে নেয় ভারত। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে দক্ষিণ তালপট্টি বা নিউমুর আইল্যান্ডের কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই। দ্বীপের সম্পূর্ণ অংশ আবার সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে গেছে।
আর তাতে ভারতের কপাল পুড়লেও বাংলাদেশকে দু’হাত ভরে দিচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা। একটি চর ভারত নিয়ে গেলেও চর কুকরিমুকরি, চর ওসমান, কামাল, তারুয়া দ্বীপ, চর গাঙ্গুলিয়ার মতো নতুন নতুন চর জেগে উঠেছে বাংলাদেশে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, প্রতিবছর দেশে প্রায় ৩২ কিলোমিটার ভূমি নদীভাঙন ও সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছে। আর ভুটান, নেপাল, ভারত থেকে বয়ে আনা পলি বা সেডিমেন্টের সাথে প্রতি বছর প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার নতুন দ্বীপ জেগে উঠছে। কোনো কোনোটি ইতোমধ্যেই স্থায়ী অবকাঠামো পেয়েছে।
এ থেকেই বোঝা যায়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বেড়ে গেলে বাংলাদেশ একদিন ডুবে যাবে — এই ধারণাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ, প্রতিবছর নতুন নতুন দ্বীপ প্রাকৃতিকভাবে জেগে উঠছে।
আর ভারত থেকে বয়ে আসা সেডিমেন্ট যদি ‘ক্রস ড্যাম্প’ বাদ দিয়ে আটকে রাখা যায়, তাহলে আগামী কয়েক দশকে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার ভূমি মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত করা সম্ভব — যা প্রায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সমান ভূখণ্ড হতে পারে।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?