বাংলাদেশে টেক্সটাইল, ক্লিন এনার্জি, ইলেকট্রিক যানবাহন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে চীন। ঢাকায় এক সেমিনারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের আরও গভীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেইজিংয়ের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
তিনি জানান, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের আগে দেশটিকে সকল করযোগ্য পণ্যে শূন্য-শুল্ক সুবিধা প্রদানের পরিকল্পনা করছে চীন। পাশাপাশি চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশকে আরও আকর্ষণীয় করতে উভয় দেশের যৌথ অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইতোমধ্যে ১৪টি চীনা সংস্থা বাংলাদেশে মোট ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস আয়োজিত এই সেমিনারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারী বিশিষ্টজনরা বলেন, বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরও ভারসাম্যপূর্ণ এবং টেকসই করতে কৌশলগত নীতি গ্রহণ জরুরি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির সাবেক রেক্টর মাশফি বিনতে শামস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন এবং স্বাধীন গবেষক সৈয়দ শাহনাওয়াজ মহসিন।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন দুই দেশের অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা চীন-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে একটি প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী ভবিষ্যৎ গড়তে চাই, যেখানে কৌশলগত সহযোগিতার বাস্তব ফলাফল নিশ্চিত হবে।” তিনি আরও বলেন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক জনগণকেন্দ্রিক এবং স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো খাতগুলোতে চীন তার সহযোগিতা সম্প্রসারণ করছে।
কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীন নতুন উদ্যোগ হিসেবে প্রথম ধাপে বাংলাদেশি রোগী ও চিকিৎসকদের চীনে পাঠানোর পরিকল্পনার কথাও জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, বাংলাদেশি নাগরিকদের চীনে ভ্রমণ, শিক্ষাগ্রহণ ও ব্যবসার প্রতি আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সংযোগকে আরও দৃঢ় করছে।
বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে ৫৮টি সরাসরি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে, যা বাণিজ্য ও পর্যটনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা পদ্ধতিকে আরও সহজতর করতে চীন সুশৃঙ্খল নীতিমালা বাস্তবায়ন করছে বলেও জানান তিনি।
সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে চীনের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। আলোচনায় আঞ্চলিক কূটনীতিতে চীনের ভূমিকা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকটে আরও সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়।
সেমিনারে সেন্টার ফর অল্টারনেটিভসের উদ্যোগে “বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি” শীর্ষক একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, যেখানে চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতি ব্যাপক জনসমর্থনের চিত্র উঠে আসে। জরিপে দেখা গেছে, ৯৯ শতাংশ বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারী চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ইতিবাচকভাবে দেখেন, যা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রতি জনগণের আস্থার প্রতিফলন।
২০২২ সালে যেখানে ৬০.১ শতাংশ বাংলাদেশি চীন সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেন, ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৬৬.৭ শতাংশে পৌঁছেছে। একইভাবে, চীনের অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নকে স্বীকৃতি দেওয়া বাংলাদেশিদের হার ২০২২ সালে ৫০ শতাংশ থাকলেও ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক দিন দিন আরও দৃঢ় হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত হবে।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?