ইসলামি সমাজে ‘মুনাফিক’ শব্দটি এক বিশেষ ধরনের মানুষকে বুঝায়, যাদের অন্তরে কুফরি ও ইসলামবিরোধিতা লুকানো থাকে, কিন্তু বাইরে ইসলামের পরিচয় ধারণ করে। এই শব্দিটির উৎপত্তি ‘নেফাক’ শব্দ থেকে, যার অর্থ হল কোনো কিছু গোপন রেখে তার বিপরীত প্রকাশ করা।
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় মুনাফিক বলতে ওই ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যারা প্রকাশ্যে মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও অন্তরে ইসলামকে অস্বীকার করে এবং তারা ইসলামি সমাজে অনুপ্রবেশ করে ইসলামের মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে।
পবিত্র কুরআন ও হাদিসে মুনাফিকদের বহু আলামত বা নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে, যা তাদের চিনতে সাহায্য করে।
আজ আমরা এসব নিদর্শনের আলোকে মুনাফিকদের চিনতে ও তাদের থেকে সতর্ক থাকতে চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ ।
মুনাফিকের আলামত ও নিদর্শন
কুরআন নিয়ে সন্দেহপোষণ: নিজেকে ঈমানদার বলে দাবি করেও পবিত্র কুরআনের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করা (সুরা তাওবা: ৪৫)।
আল্লাহ ও রসুলের নির্দেশনা অপছন্দ করা: আল্লাহ ও তাঁর রসুলের দেওয়া হুকুম ও বিধি-বিধান অপছন্দ করা (সুরা নিসা: ৬০-৬১)।
ইসলামের বিজয়কে অপছন্দ করা: ইসলামের বিজয় ও মুসলিমদের সাহায্য করা অপছন্দ করা, এবং মুসলমানদের অপমান বা লাঞ্ছনায় খুশি হওয়া (সুরা তাওবা: ৫০; সুরা আলে ইমরান: ১১৯-১২০)।
মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি: মুসলমানদের মধ্যে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা ও অনৈক্য তৈরিতে সহায়তা করা (সুরা তাওবা: ৪৭)।
কাফেরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব: মুসলিম বাদ দিয়ে কাফের সম্প্রদায়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা (সুরা মুজাদালাহ: ১৪)।
মুমিনদের উপহাস করা: মুমিনদের নিয়ে টিপ্পনী কাটা, উপহাস করা এবং তাদের দোষ খোঁজার চেষ্টা করা (সুরা তাওবা: ৭৯)।
আল্লাহর আহ্বানে দাম্ভিকতা: যখন আল্লাহর দিকে ডাকলে, তখন দাম্ভিকতার সঙ্গে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া (সুরা মুনাফিকুন: ৫)।
নামাজে অলসতা: সালাতকে ভারী মনে করা এবং নামাজে অলসতা করা। (সুরা নিসা: ১৪২) রসুল সা. বলেছেন, মুনাফেকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজ অত্যন্ত কঠিন (বুখারি: ৬৫৭; মুসলিম: ৬৫১)
নিরপরাধ মুমিনদের কষ্ট দেওয়া: নিরপরাধ মুমিনদের ফাঁদে ফেলে তাদের কষ্ট দেওয়া। (সুরা আহজাব: ৫৭-৫৮)
মুনাফিক চেনার উপায়
মুনাফিকদের চিহ্নিত করা সাধারণত সহজ নয়, কারণ তারা তাদের অন্তরের বিশ্বাস গোপন রাখে এবং বাইরের আচরণে ইসলামিক সত্ত্বার ছাপ দেয়। তবে, প্রিয় নবী সা. মুনাফিকদের চিহ্নিত করার জন্য কিছু আলামত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি: যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করার পর তা ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে’। (বুখারি, কিতাবুল ঈমান: ১/৮৯)
এছাড়াও, ‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান, সে খাঁটি মুনাফিক, সেগুলো হলো: মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ করা, আমানত খেয়ানত করা ও বিবাদে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি দেওয়া (সহিহ বুখারি: ৩৪)।
মুনাফিকদের চেনা সহজ কাজ নয়, কিন্তু নবী সা.-এর নির্দেশনা অনুসরণ করে আমরা তাদের আলামত চিহ্নিত করতে পারি। আমাদের উচিত, নিজেদের ঈমানের প্রতি সতর্ক থাকা, এবং যেকোনো প্রকার নেফাক থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেয়া।
আমাদের জীবন থেকে মুনাফিকের আলামত দূর করা এবং সুস্থ, সৎ ও ঈমানদার মুসলমান হিসেবে জীবন অতিবাহিত করা একান্ত জরুরি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে মুনাফিক ও মুনাফিকদের আলামত থেকে হেফাজত করুন। আমিন।