নবী নূহ আ., আল্লাহর একজন অত্যন্ত প্রিয় বান্দা ছিলেন। তিনি মানুষকে সত্য পথে ডাকতেন, কিন্তু তারা তাঁর কথা শুনত না। তবুও তিনি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য ক্ষমা চাইতেন। এমন একজন মহান ব্যক্তির জীবন থেকে আমরা অনেক মূল্যবান শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
একদিন, নবী নূহ আ. একটি কালো, কুৎসিত কুকুরকে দেখে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তিনি মনে করলেন, আল্লাহ কেন এমন একটি কুৎসিত প্রাণী সৃষ্টি করলেন? কিন্তু আল্লাহ তাঁকে এই ঘটনার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিতে চাইলেন।
আল্লাহর নির্দেশে, সেই কুকুরটির মুখ খুলে গেলো এবং সে বলল, হে নূহ ! তুমি আমার কুৎসিত আকৃতি দেখে ঘৃণা করছো। কিন্তু তুমি কি জানো না, আল্লাহ আমাকে এভাবে সৃষ্টি করেছেন? যদি আমার ক্ষমতা থাকত, তবে আমি কখনও এমন আকৃতি গ্রহণ করতাম না। আমি কুকুর হওয়া পছন্দ করতাম না, তবে আমি আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি কখনোই আপত্তি জানাইনি।
কুকুরটির এই কথা শুনে, নবী নূহ আ. অত্যন্ত লজ্জিত হলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দা হিসেবে তিনি কত বড় ভুল করেছেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মাটিতে পড়ে কাঁদতে শুরু করলেন। তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে লাগলেন এবং তাঁর অনুশোচনা প্রকাশ করতে লাগলেন।
দীর্ঘ দশ বছর ধরে, নবী নূহ আ. কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। তাঁর চোখের পানি এত বেশি পড়েছিল যে, চিবুকের নিচে দাগ পড়েছিল। লোকজন তাঁকে দেখে তাঁকে নূহ ডাকতে শুরু করল, যা আরবি ভাষায় ক্রন্দনকারী অর্থে ব্যবহৃত হয়।
এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। হযরত নূহ আ. যেমন নিজেকে সংশোধন করেছেন, তেমনি আমাদের উচিত, আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি সঠিক মনোভাব রাখা এবং শুধুমাত্র বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোনো কিছু বিচার না করা। সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতি এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা আমাদের কর্তব্য।
আমরা অনেক সময় অন্যদের দোষ নিয়ে মন্তব্য করি, কিন্তু নিজেদের ভুলগুলো একদম উপেক্ষা করি। অন্যদের সমালোচনা করা, তাদের ভুল খুঁজে বের করা আমাদের হৃদয়ে এক ধরনের গুপ্ত ব্যাধি সৃষ্টি করে, যা আমাদের আত্মা ও সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
নবী নূহ আ. -এর এই ঘটনা আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। যদি আমরা এই শিক্ষাগুলো আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে আমরা একজন ভালো মানুষ হতে পারব এবং সমাজে শান্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই শিক্ষাগুলি হৃদয়ে ধারণ করার তৌফিক দিন। আমিন।