আশরাফুল ইসলাম,শেকৃবি প্রতিনিধি
বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন ও কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, “কৃষকরা যদি সমন্বিতভাবে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারেন, তাহলে তারা ন্যায্য মূল্য পাবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে। এজন্য আমাদের কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে।”
শেকৃবি বহিরাঙ্গন কার্যক্রম বিভাগের আয়োজনে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা কৃষি অফিসে “প্রান্তিক কৃষকদের সমন্বিত চাষাবাদ ও কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ” শীর্ষক একটি ট্রেনিং কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল লতিফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ বেলাল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ আবুল বাশার এবং মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন শেকৃবির বহিরাঙ্গন কার্যক্রম বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জামশেদ আলম।
কৃষি জমির সংকট ও প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশ প্রতিদিন ০.৫% হারে কৃষি জমি হারাচ্ছে। যদি এই ধারা চলতে থাকে, তাহলে আগামী ২০০ বছরের মধ্যে দেশে কৃষি জমির অস্তিত্ব থাকবে না।” তিনি উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড বীজের ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ বেলাল হোসেন বলেন, “সিংগাইর উপজেলা ঢাকার কিচেন হাউজ হিসেবে পরিচিত। আমাদের কৃষকদের নিরলস পরিশ্রমের ফলেই বাংলাদেশ করোনা মহামারির মতো সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। কৃষির উন্নয়ন ও গবেষণায় আমরা সর্বদা কাজ করছি।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল লতিফ বলেন, “আমি নিজেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ, ছোটবেলা থেকেই কৃষির সঙ্গে জড়িত। তাই কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করার জন্য সব সময় কাজ করার চেষ্টা করি। কৃষকদের পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রির জন্য আমাদের কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। কারণ কীটনাশকের প্রথম শিকার কিন্তু কৃষকরাই। তাই রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এটি শুধু কৃষকের স্বাস্থ্য রক্ষা করবে না, বরং জমির উর্বরতাও বজায় রাখবে।”
প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে আলোচি বিষয় গুলো হলো: কৃষি জমির সঠিক ব্যবহার ও সুপরিকল্পিত শ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি। কৃষকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার উপায় এবং রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে ফেরোমন ট্র্যাপ, গ্লু ট্র্যাপ, লাইট ট্র্যাপের মতো নন-ক্যামিক্যাল পদ্ধতির ব্যবহার।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জামশেদ আলম বলেন, “মানিকগঞ্জ কৃষিক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনাময় স্থান। আমরা এ এলাকায় কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে কাজ করছি এবং বেশ কিছু প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করেছি। সিংগাইরের কৃষি উন্নয়নে ভবিষ্যতে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও অন্যান্য বক্তারা কৃষকদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং কৃষকদের স্বাবলম্বী করতে কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির আহ্বান জানান। পরিশেষে সভাপতি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।