গাজা উপত্যকায় হামাসের প্রতিরোধ টানেল এবং গেরিলা কৌশল ইসরাইলি সেনাবাহিনীর জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসরাইলি সামরিক বিশ্লেষক আভি আশকেনাজি।
তিনি এ লড়াইকে
“চামচ দিয়ে সমুদ্র সেঁচার মতো” আখ্যা দিয়েছেন।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘মা’আরিভ’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আশকেনাজি বলেন,
“গাজায় যেখানেই আপনি পা রাখবেন, সেখানেই একটি সুড়ঙ্গ রয়েছে। এখনও হাজার হাজার সুড়ঙ্গ চিহ্নিত করা যায়নি।”
তিনি আরও জানান, “প্রাথমিক ধারণা ছিল হামাস দুর্বল হয়ে গেছে, কিন্তু বাস্তবে তারা এখনও শক্তিশালী এবং সংগঠিত। দক্ষিণ গাজা, বিশেষত রাফাহ ও আল-মাওয়াসি এলাকায় টানেলের মাধ্যমে শত শত যোদ্ধা স্থানান্তর করা হয়েছে।”
সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে গাজার যুদ্ধকে তিনি ইসরাইলের জন্য “অত্যন্ত জটিল ও অবিরাম হুমকি” হিসেবে উল্লেখ করেন। আশকেনাজি বলেন,
“হামাস যোদ্ধারা টানেল থেকে বের হয়ে গুলি চালিয়ে আবার অন্তর্হিত হয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনা দিনে একাধিকবার ঘটছে, যা সেনাদের সর্বক্ষণিক সতর্ক অবস্থানে থাকার প্রয়োজন তৈরি করছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এটি কি সবসময় সম্ভব?”
এদিকে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর রেডিও এক প্রতিবেদনে জানায়, গাজার যুদ্ধে সেনা সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলে রিজার্ভ ব্রিগেড ২০৫ মোতায়েন রয়েছে, কিন্তু মাত্র ৬০ শতাংশ সৈন্যই সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে। সেনা ঘাটতির কারণে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করতে পারছে না ইসরায়েলি বাহিনী।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, রিজার্ভ বাহিনীর অভাব শুধু সংখ্যাগত সমস্যা নয়, এটি মনোবল ও কৌশলগত দুর্বলতারও ইঙ্গিত দেয়। আশকেনাজি বলেন, “ইসরায়েলি বাহিনী যদি বড় আকারে সৈন্য মোতায়েন করে, তাহলে হামাসের গেরিলা বাহিনী তাদের ওপর আরও প্রবল হামলা চালাতে পারে, যা ইসরায়েলি বন্দীদের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।”
সম্প্রতি ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল ‘কান’-এর এক প্রতিবেদনেও সেনাবাহিনীতে নতুন রিক্রুটের সংকট, রিজার্ভ সেনাদের অসন্তোষ এবং যুদ্ধ ক্লান্তির বাস্তবতা তুলে ধরা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজার ভেতরে প্রতিরোধ টানেল ব্যবস্থাপনা শুধু হামাসের কৌশলগত শক্তির প্রতীক নয়, এটি ইসরাইলি প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সক্ষমতারও ব্যর্থতা নির্দেশ করে। দীর্ঘ সময় ধরেই এই টানেলগুলো ব্যবহার করে হামাস গোপনে অস্ত্র মজুদ, সৈন্য স্থানান্তর ও প্রতিরোধ অভিযান পরিচালনা করে আসছে, যা ইসরায়েলি সামরিক পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা দিয়েছে।
মাঠ পর্যায়ের চিত্র বলছে, রাফাহ ও খান ইউনুস এলাকায় টানেলভিত্তিক হামলায় ইসরাইলি বাহিনীর মৃত্যুহার বাড়ছে। পাশাপাশি বন্দী ইসরায়েলি সেনাদের উদ্ধার না হওয়া, গাজায় স্থানীয় জনসমর্থন বৃদ্ধি পাওয়া এবং হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডের গতিশীলতা ইসরায়েলের জন্য দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধ জয়ের কৌশলকে দুর্বল করে তুলছে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সত্ত্বেও ইসরায়েলি সামরিক অভিযান থেমে নেই। তবে মানবিক বিপর্যয়, ভেঙে পড়া অবকাঠামো এবং যুদ্ধজর্জর জনগণকে ঘিরে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উদ্বেগও ক্রমেই বাড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে সামরিক বিশ্লেষকদের মত, যদি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয়, তবে ইসরায়েল কেবল গাজায় নয়, বরং নিজের সামরিক ও রাজনৈতিক অভ্যন্তরেও গুরুতর চাপের মুখে পড়বে। আর হামাসের টানেল নেটওয়ার্ক যতদিন সক্রিয় থাকবে, ততদিন ইসরায়েলের জয়ের কৌশল চূড়ান্তভাবে সফল হওয়া সম্ভব নয়।

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয়কে ধরে এনেছে গ্রামবাসী। এব্যাপারে আপনার মতামত কি?