সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) একটি অস্থায়ী সংবিধানে স্বাক্ষর করেছেন, যা দেশটির পরিবর্তনকালীন শাসনব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে আগামী পাঁচ বছর কার্যকর থাকবে। এই সাংবিধানিক ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসলামপন্থি শাসনব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত হবে নতুন সিরিয়া। এর মাধ্যমে দেশটি আগের রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে একটি নতুন প্রশাসনিক কাঠামোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
এই অস্থায়ী সংবিধান স্বাক্ষরের মাধ্যমে জানুয়ারিতে বাতিল হওয়া আগের সংবিধানের জায়গা নেবে। নতুন সংবিধান অনুসারে, সিরিয়ায় ইসলামি আইন (শরিয়াহ) হবে রাষ্ট্রের প্রধান আইনব্যবস্থা এবং ইসলাম হবে রাষ্ট্রধর্ম। দেশটির বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন এবং আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া ইসলামি বিধানের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। তবে সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং নাগরিকদের মৌলিক স্বাধীনতার বিষয়টি সংবিধানে কীভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
এর আগে, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা জানিয়েছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে। তার মতে, এই সময়ের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল করা এবং একটি কার্যকর সরকার গঠন করা জরুরি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নতুন সংবিধানের মাধ্যমে দেশটির শাসনব্যবস্থার একটি নির্দিষ্ট কাঠামো প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান গৃহযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
সাংবিধানিক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরের সময় আহমেদ আল-শারা বলেন, “এটি সিরিয়ার জন্য একটি নতুন ইতিহাসের সূচনা করবে বলে প্রত্যাশা করছি। এর মাধ্যমে আমরা নিপীড়নের পরিবর্তে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করব।” তিনি আরও বলেন, নতুন সংবিধান সিরিয়ার জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত পরিবর্তনের ভিত্তি স্থাপন করবে এবং রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।
অপরদিকে, সিরিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংবিধান স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ইসলামপন্থি দলগুলো আরও শক্তিশালী অবস্থানে আসবে এবং সিরিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি একেবারেই নতুন মোড় নিতে পারে। নতুন সংবিধানে রাজনৈতিক বিরোধী দলগুলোর অবস্থান এবং তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ কতটুকু থাকবে, সে বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সিরিয়ার এই নতুন সংবিধান দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, পশ্চিমা বিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য শক্তিগুলোর প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সিরিয়ার মিত্র রাষ্ট্রগুলো যেমন রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানের প্রতিক্রিয়াও এই সংবিধানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।
নতুন সংবিধানের ফলে সিরিয়ার জনগণের নাগরিক অধিকার এবং বাক স্বাধীনতার প্রশ্ন নিয়েও নতুন বিতর্ক শুরু হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসলামপন্থি শাসনব্যবস্থা চালু করা হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা থেকে যায়, বিশেষ করে নারীদের অধিকার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হতে পারে।
এদিকে, দেশটির অভ্যন্তরীণ বিরোধী দলগুলো নতুন সংবিধানের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, সংবিধানে সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি রোডম্যাপ থাকা প্রয়োজন, যাতে পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হয়। তবে সরকারপন্থি দলগুলো এই সংবিধানকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এটিকে দেশকে নতুন পথে এগিয়ে নেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে এই সংবিধানের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং সরকার কীভাবে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে তার ওপর। নতুন সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর পরবর্তী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া কেমন হবে, তা পর্যবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এএফপি।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?