ইতালিতে ভিসা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটির ফাইন্যান্স পুলিশ ঢাকায় ইতালির দূতাবাসের তিন কর্মকর্তা ও দুই বাংলাদেশিকে আটক করেছে। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, এই চক্রের মূলহোতা হচ্ছেন রোমপ্রবাসী নজরুল ইসলাম।
জানা গেছে, নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ইতালি আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং নিজেকে এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিতেন। ইতালির আদালত আটক দূতাবাসের তিন কর্মকর্তাকে গৃহবন্দী করার নির্দেশ দিয়েছে, অন্যদিকে নজরুল ইসলাম ও আরেকজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ইতালির আদালতের আদেশে এই গ্রেফতারি অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিয়ো তায়ানি এক এক্স-পোস্টে। ইতালির শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোও এই ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
দেশটির প্রভাবশালী পত্রিকা ‘এল সোলে’ জানিয়েছে, রোমের এল সিচিলিয়ানো ফিস’ নামের একটি রেস্তোরাঁর মালিক নজরুল ইসলাম ঢাকায় ইতালির দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভিসা বাণিজ্য চালিয়ে আসছিলেন।
তদন্তে উঠে এসেছে, এই চক্র বাংলাদেশি কর্মীদের কাছ থেকে প্রতি ওয়ার্ক পারমিটের জন্য ১৫ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮ লাখ টাকা) এবং ভ্রমণ ভিসার জন্য ৭ হাজার ইউরো আদায় করত।
এই চক্রের অন্যতম সদস্য ঢাকার ইতালি দূতাবাসের ভিসা অফিসার রবের্তো আলবের্গো যেকোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই ওয়ার্ক পারমিট (নুল্লাওস্তা) অনুমোদন করতেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া, দূতাবাসের আরেক কর্মকর্তা নিকোলা মুসকাতেল্লো রোম ও নাপোলির ইমিগ্রেশন অফিস থেকে অর্থের বিনিময়ে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহে সহায়তা করতেন। দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে কিছুদিন আগে তাকে তুরস্কে বদলি করা হয়।
দূতাবাসের আরেক কর্মকর্তা জুসেপ্পে সুয়িয়াকেও সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছে প্রশাসন।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটিতে বিদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া কঠোর করা হয়।
এদিকে, ইতালির ক্ষমতাসীন দল ‘ফ্রাতেল্লি দি ইতালিয়া’-এর নেতা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আন্দ্রেয়া দি জুসেপ্পেকে চক্রটি ভিসা বাণিজ্যে সহায়তার বিনিময়ে ২০ লাখ ইউরো (প্রায় ২৫ কোটি টাকা), বিলাসবহুল রোলেক্স ঘড়ি, স্মার্টফোন, ট্যাব, দুবাই ভ্রমণের সুযোগসহ নানা সুবিধার প্রস্তাব দেয়।
তবে, তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে গত বছরের ৩০ মার্চ ইতালির ফাইন্যান্স পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত শুরু করে এবং পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের পর আদালতে উপস্থাপন করে।
তদন্তে দেখা গেছে, এই চক্র রোম ও নাপোলির ইমিগ্রেশন অফিস থেকে বিনা যাচাই-বাছাইয়ে ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করছিল। আদালত দ্রুত তাদের আটক করার নির্দেশ দিলে মঙ্গলবার চক্রটির সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়।
রোমের বাংলাদেশি কমিউনিটির কয়েকজন জানান, নজরুল ইসলাম গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন এবং শুধু গত বছরেই তিনি প্রায় ১৫০০ বাংলাদেশিকে ভিসার মাধ্যমে ইতালিতে প্রবেশ করিয়েছিলেন।
এই ঘটনায় ইতালির প্রশাসন আরও গভীর তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?