রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদ ঘিরে শিক্ষাঙ্গনে চরম উত্তেজনা ছড়িয়েছে। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদসহ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তারা ভবনের ভেতরে বন্দি অবস্থায় ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে প্রশাসন ভবনের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এসময় উপ-উপাচার্য গাড়িতে উঠতে গেলে ছাত্ররা তার গাড়ি ঘিরে ধরে এবং ‘শিক্ষা-ভিক্ষা একসাথে চলে না’ স্লোগান দিতে থাকে। প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে তারা গাড়ির ওপর টাকা ছুড়ে মারেন। পরে উপ-উপাচার্য ও প্রক্টর বাসভবনের দিকে রওনা দিলে শিক্ষার্থীরা গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপ-উপাচার্য জুবেরী ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে আশ্রয় নেন, কিন্তু সেখানেও স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ।
এসময় ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরসহ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি হয়। প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান অভিযোগ করেছেন, ধাক্কাধাক্কির মধ্যে তার ঘড়ি ও অর্থ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন বিকেল ৫টার দিকে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। এতে আন্দোলনকারীদের ভিড় আরও বাড়তে থাকে এবং প্রশাসন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা কেবল একটি কোটা আন্দোলন নয়, বরং সরকারের আরোপিত নীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অদক্ষতার বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের গভীর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষার্থীদের প্রতীকী প্রতিবাদ—গাড়ির ওপর টাকা ছুড়ে মারা—প্রমাণ করে যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে আর ক্ষমতাসীনদের দালালি করতে দেবে না। ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্য সংহতি পুরো পরিস্থিতিকে আরও রাজনৈতিক রূপ দিয়েছে।
এই অচলাবস্থা প্রমাণ করছে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র আন্দোলন এখন আর শুধুমাত্র শিক্ষাব্যবস্থার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের ব্যর্থতা ও সরকারের চাপিয়ে দেওয়া নীতির কারণে ছাত্রসমাজ নতুন করে সংঘবদ্ধ হচ্ছে, আর এর অভিঘাত গোটা দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে পড়তে বাধ্য।