হাবিবুর রহমান সাগর (জাবি প্রতিনিধি ):
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গণ-ইফতার কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১১ মার্চ) রমজানের ১০ম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এ কর্মসূচীর আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা।
ইফতার মাহফিলে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আজকের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথকভাবে বসার ব্যবস্থা করে আয়োজকরা। রমজান মাসের পবিত্রতা এবং তার মর্যাদাকে গভীরভাবে অনুভব করা এই আয়োজনটি সবার জন্য ছিল অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এবং আবেগময়।
গণ-ইফতার অনুষ্ঠানে সাধারণ রোজাদার ও শিক্ষার্থীরা আসরের নামাজের পর থেকে একে একে খেলার মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে, কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত এবং ইসলামী বিভিন্ন পরিবেশনা উপস্থিত সবার মধ্যে এক আত্মিক প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয়। এ পরিবেশনা গুলি ধর্মীয় একাত্মতা এবং রমজানের মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছিল।
ইফতারের পূর্বে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল মসজিদের ইমাম ও খতিব আবদুল্লাহ সাদ দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন। তাঁর মোনাজাতের মাধ্যমে উপস্থিত সকল রোজাদার আল্লাহর কাছে ক্ষমা, রহমত এবং শান্তি কামনা করেন। মাগরিবের আজান শোনার পর, সবাই একসঙ্গে ইফতার করেন এবং রোজা ভাঙেন। একত্রিত হয়ে রোজা ভাঙার এই মুহূর্তটি ছিল এক অতি আবেগময় অভিজ্ঞতা। যা রোজাদারদের মাঝে এক অভূতপূর্ব সম্পর্ক এবং ধর্মীয় ঐক্য সৃষ্টি করেছিল।
গণ-ইফতার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ এবং প্রক্টর অধ্যাপক এ. কে. এম. রাশিদুল আলম অংশগ্রহণ করেন।
এসময় উপ-উপাচার্য বলেন,”এ গণ-ইফতার কর্মসূচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা এক নজির সৃষ্টি করেছে। শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। এই আয়োজনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের একত্রিত করেছে। এটি একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম আবর্তনের শিক্ষার্থী
ঐশী ইসলাম বলেন,”ক্যাম্পাসে থাকাকালীন পরিবার ছাড়া ইফতার করা সবচেয়ে কষ্টকর।যখন শুনলাম যে গণইফতার হবে তখন এইটা ভেবে অনেক খুশি হয়েছি যে অন্তত একদিন একা ইফতার করতে হবে না। সবার সাথে ইফতার করার মাধ্যমে অন্যরকম একটা প্রশান্তি পেয়েছি। সবশেষে বলবো যে এত্তবড় একটি আয়োজন হয়েছে কিন্তু তা ছিল সুশৃঙ্খল ও সুন্দর, এমন ইফতার আয়োজন আরো বেশি বেশি হোক এটাই চাওয়া।”
৫০ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন,
“গত বছর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার আয়োজনে বাঁধার প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ স্বরূপ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৪৯ ব্যাচের আয়োজনে গণ ইফতার আয়োজন করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিক ৫০ ব্যাচের আয়োজনে এবার প্রায় ১হাজারের বেশি মানুষের ইফতার আয়োজন করা হয়েছে। রমজানের এই পবিত্র মাসে আমরা একসঙ্গে বসে ইফতার করার যে সৌভাগ্য অর্জন করেছি, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
আমাদের প্রত্যাশা প্রতিবছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে গণ ইফতার আয়োজন হোক। এই গণ ইফতার আয়োজন শুধু যেনো খাবার গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি আমাদের হৃদয়ে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহানুভূতির বন্ধন আরও দৃঢ় করবে। যা ইসলামি ভ্রাতৃত্ববোধের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
গণ-ইফতার অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐক্য, সহযোগিতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার মনোভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় সমাবেশই নয় বরং একটি সামাজিক অনুষ্ঠানও ছিল। যেখানে সকল সম্প্রদায় এবং পেশার মানুষ মিলিত হয়ে একে অপরের সাথে ইফতার করেছেন।
এ আয়োজনে জাহাঙ্গীরবগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রমাণ করেছে যে, ইসলামের পবিত্র এই মাসের মূল্যবোধ শুধু ধর্মীয় দিক দিয়েই নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের এক দুর্দান্ত উদাহরণ। রমজানের প্রকৃত উদ্দেশ্য-সামাজিক সংহতি, মানবিকতা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার চেতনা-এই গণ-ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে পূর্ণ হয়েছে।